সুদে আনা টাকা যাচ্ছে মানব পাচারকারীর পকেটে

ভিটে বিক্রি করে সুদে আনা চার লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। ভিটেমাটি বিক্রি করলে পরিবার নিয়ে দাঁড়াতে হবে রাস্তায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলেন মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়া যশোরের ঝিকরগাছা থানার মোহাম্মদ জসিম। টাকা দিয়েও বিদেশ যেতে না পেরে রাজমিস্ত্রির কাজ করা তিন কন্যার জনক জসিম এখন পাগলপ্রায়।

সম্প্রতি পাচারকারী চক্রের সদস্য শামসুদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনজনকে। তারা সবাই পুরুষ। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তারা তুলে ধরেন প্রতারিত হওয়ার নানান বিষয়।

জসিম বলেন, ‘লেবার ভিসায় সৌদি আরব যাওয়ার জন্য যশোরের ঝিকরগাছার প্রতিবেশী সাইফুলের সঙ্গে পরিচয়। বিদেশফেরত সাইফুল লোকজনদের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। সে কারণেই তার দ্বারস্থ হই। পরে সাইফুলের মাধ্যমে শহিদুল নামে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। লেবার ভিসায় সৌদি আরব নেওয়ার বিষয়ে ৪ লাখ টাকায় রফা হয়। সাইফুল ও শহিদুলের কথামতো ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেই।’

জোগাড় করা টাকার পুরোটাই লোকজনদের কাছ থেকে সুদে আনা হয়েছে উল্লেখ করে জসিম বলেন, এত টাকা কীভাবে ফেরত দেবো? বাড়ি গেলেই তো টাকার জন্য আসবেন তারা। আমিতো এখন এত টাকা ফেরত দিতে পারবো না। কী করবো মাথায় ঢুকছে না। যদি বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়, তাহলে তিন মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো জানি না।

জসিম আরও জানালেন, ‘একমাস ধরে উত্তরার একটি হোটেলে আমাদের কয়েকজনকে রাখা হয়। সাইফুল-শহিদুল প্রায় প্রতিদিনই বলতো কয়েকদিনের মধ্যেই টিকিট করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা বলেছিল জিয়া নামের এক ব্যক্তি আমাদের ভিসা করিয়ে দিয়েছে। সে সব ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এখন আমরা প্রতারণার শিকার। আমি এখন নিঃস্ব।’

শুধু জসিম নয়, এই চক্রের খপ্পরে পড়েছেন কালীগঞ্জের শফিয়ার রহমানও। তিনি বলেন, ‘এক পরিচিত ভাইয়ের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার জন্য সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমাদের গ্রামে সাইফুলের ভায়রা সোহাগ থাকতো। তার মাধ্যমেই যোগাযোগ। সাইফুলের কথামতো বিদেশ যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা জোগাড় করি। টাকাটা আশা সমিতি (আশা এনজিও) থেকে নিয়েছিলাম। সব হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো, মাথায় আসছে না।’

পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার খুলনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য আমিও চার লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা সংগ্রহ করেছি সুদের ওপর। ভেবেছিলাম বিদেশ গিয়ে কাজ করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবো। এখন অন্ধকার দেখছি। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো জানি না।’

র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুবাই অবস্থান করে সেখান থেকে বাংলাদেশে মানবপাচার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে জিয়া নামের এক ব্যক্তি। জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছি। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত পাচারচক্রের সদস্য শামসুদ্দিনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।’