পারিবারিক আদালত অবমাননার শাস্তির বিধান কঠোর করতে হবে: হাইকোর্ট

দেশের পারিবারিক আদালতগুলোর আদেশ/রায় অবমাননায় শাস্তির বিধান সংশোধন করে আরও কঠোর করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শনিবার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সাক্ষরের পর এ সংক্রান্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

আদালত তার রায়ে বলেছেন, পারিবারিক আদালতগুলোর বিভিন্ন আদেশের মধ্যে বিশেষত শিশুসন্তানকে দেখা সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ মানছে না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্টে এসে হেবিয়াস করপাস (এক প্রকারের রিট) অধিক্ষেত্রে এসে আশ্রয় (রিট দায়ের) গ্রহণ করছেন।

হাইকোর্টের নজরে এসেছে, ২০১০ সালে থেকে ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের দাখিলকৃত মামলাগুলো এখনও বিচারাধীন। শিশুদের অভিভাবক ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো এতো দীর্ঘ সময় ধরে চলা হতাশাজনক এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এ সকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এমতাবস্থায় সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল পারিবারিক আদালতগুলোকে শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো যাতে ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলো। আইন মন্ত্রণালয় সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রায়ে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

আদালত পারিবারিক আদালতের আদেশ/রায় অবমাননার সাজার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ এর ১৯ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করতে হবে।  এক্ষেত্রে দেওয়ানি জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। আদালত প্রত্যাশা করে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

প্রসঙ্গত, রংপুরের মেয়ে ও রাজশাহীর এক ছেলের ২০১১ সালে বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তাদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। এ অবস্থায় শিশুটিকে ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা করেন শিশুটির মা। তবে সেখানে মামলার দীর্ঘসূত্রিতার ফলে শিশুটির মা সন্তানের হেফাজত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালতে আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। সেই রুলের শুনানি শেষে ঘোষণা করা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।