শ্বশুরবাড়িতে পাঞ্জাবি লুকিয়ে রেখেছিলেন কামাল

বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মো. কামাল উদ্দিনগতবছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মো. কামাল উদ্দিন(৩৪) এর ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। সেদিনের ঘটনার পর কামালের কার্যক্রম সন্দেহজনক ছিল বলেও জানিয়েছেন তারা। সেদিন ঘটনার সময় তার পরনে থাকা সাদা পাঞ্জাবিটি তিনি তার শ্বশুরবাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে জানতে পেরেছেন, যা পুলিশ শনিবার উদ্ধার করেছে। এদিকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে রবিবার আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সময় কামাল দুইবার ভিড়ের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে থাকার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে নারী লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তিনি স্বীকার করতে চাচ্ছেন না। রবিবার দুইদিনের রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে নিয়ে গেলে তিনি আদালতে ম্যাজিস্টেটের সামনে কান্নাকাটি করেন। তবে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি। পরবর্তীতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে প্রয়োজনে তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার সময় সেখানে যারা ছিল তাদের কার্যকলাপ বিবেচনা করেই আটজনের ছবি আমরা প্রকাশ করেছিলাম। সেই আটজনের মধ্যে কামালও একজন। তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে যেকোনও সময় আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়।’সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়া কামালের ছবি
বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার একমাস পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার খাঁজা দেওয়ান প্রথম লেনের নিজ বাসার সামনে থেকে মো. কামালকে গ্রেফতার করে। একইসঙ্গে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে আদালতে আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস।

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে কামাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা জানালেও নারী লাঞ্ছনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছেন। ওই ঘটনায় জড়িত অন্য সাতজনকে তিনি চেনেন না বলেও জানান।’

দীপক কুমার বলেন, ‘ঘটনার পর তিনি দাড়ি ক্লিন-সেভ করেছেন। পরনে থাকা পাঞ্জাবিটি তার শ্বশুরবাড়ি হাজারীবাগে লুকিয়ে রেখেছিল। সেটি ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় তার জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহ হয়। তাছাড়া সেখানে সেদিন তিনি ছিল বলে নিজেই দাবি করেছেন।’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এলাকায় তার নামে খারাপ কোনও রিপোর্ট পাইনি। তবে তার অর্থ এই নয় যে তাকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হবে।’

রবিবার দুপুরে কামালের বোন সাহিদা বেগম এ বিষয়ে কথা বলতে প্রথমে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে তিনি জানান, একজন নির্দোষ মানুষকে দোষী করা হচ্ছে। কথা বলে কী হবে? আপনারা কী করতে পারবেন? সেখানে কি কামাল একা ছিল? কামাল বিবাহিত, ঘরে তার বউ আছে, সে কেনও ওখানে গিয়ে এসব করবে?’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘যে কজনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তারমধ্যে কামাল সবচেয়ে বয়স্ক। তার পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। তাই এসব বিষয়ে এখনই কোনও উপসংহার টানা যাবে না। তদন্ত হোক, এখনও সময় আছে। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

কামালের বোন বলেন, ‘কামাল বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার ডায়াবেটিস আছে। তার ওষুধের কাগজ পুলিশ দেখছে। আমাদের লোকজন আজ আদালতে ছিল। আমার ভাই নির্দোষ।’

উল্লেখ্য, গত বছর পহেলা বৈশাখে নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাধিক ফটকে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। যা ওই এলাকায় স্থাপিত পুলিশের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ নিয়ে তখন দেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবিকে।

/এআরআর/এসএম/এএইচ/