ঈদকে সামনে রেখে এখন সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর কুষ্টিয়ার দর্জি পল্লী। বাহারি নকশার কাপড় বানাতে সেখানে ভিড় করছেন অনেকেই। কুষ্টিয়ার দর্জি পল্লীর কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই এখন। অবশ্য ব্যস্ততা শুরু হয়েছে এক মাস আগে থেকেই। এজন্য সাধারণ দিনের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন তারা। সামনে ঈদ। তাই রুজি-রোজগারের একমাত্র সম্বলটি যেন এক মুহুর্তের জন্যও বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। নতুন করে অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধ, চলছে পোশাক সরবরাহের কাজ।
চাহিদা মতো নতুন পোশাক পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। বাড়ানো হয়েছে পোশাক তৈরির মজুরি- এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তারা ছুটে যাচ্ছেন দর্জি পল্লীতে। টেইলার্স মালিকরা বলছেন, পছন্দের পোশাকের জন্য রেডিমেড থ্রি-পিস ও থানকাপড় কিনে ক্রেতারা পাড়ি জমাচ্ছেন দর্জি পাড়ায়। ক্রেতাদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা রেখে কাজ করছেন দর্জিরাও। শবে বরাতের আগে থেকে পোশাক কারিগরদের ছুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কোনও কোনও টেইলার্স কাজের চাপ সামলাতে মৌসুমী কারিগর এনেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দর্জি পাড়া হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া পাঁচ রাস্তার মোড়ের নীডস টেইলার্স, ডলফিন টেইলার্স, এনএস রোড এলাকার ফারুক টেইলার্স, মৌসুমী টেইলার্স, কুষ্টিয়া টেইলার্স, আমিরুল টেইলার্সসহ বিভিন্ন টেইলার্সের কারিগরদের এক মুহূর্তের জন্য অবসর নেই। এছাড়া পাড়া-মহল্লার টেইলার্সও চলছে সমান তালে। দিনরাত নতুন নতুন পোশাক বানাচ্ছেন তারা। এ প্রসঙ্গে এনএস রোডের ফারুক টেইলার্সের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে তাদের ব্যস্ততা খুব বেড়েছে। শবে বরাতের আগে থেকে ক্রেতারা ঈদের পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন। ২৫ রমজানের পর তাদের পক্ষে আর অর্ডার নেওয়া সম্ভব নয় হবে না। যারা রেগুলার কাস্টমার তাদের জন্য হয়তো কিছু অর্ডার নেওয়া হবে। তবে এ সুবিধা নতুন কাস্টমারদের জন্য নয়। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই টেইলার্স মালিকরা নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ টেইলার্সই নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও অর্ডার যেভাবে আসছে তাতে ২৫ রমজানের পর আর অর্ডার গ্রহণ সম্ভব হবে না। সানমুন টেইলার্সের মালিক বাবু বলেন, এ বছর পোশাক বানানোর মজুরি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কারিগরদের মজুরি, দোকান ভাড়া, সুতা ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্ডারের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিছু টেইলার্স আবার কাজের চাপের কারণে অতিরিক্ত মজুরি হাতিয়ে নিতেও তৎপর। ছেলেদের প্যান্ট-শার্টের অর্ডার টেইলার্সগুলো এখনও নিচ্ছে। তিনি বলেন, কাপড় অনুযায়ী জামা বানানোর মজুরি নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সিল্ক জর্জেট, কাতান, লেলিন, বেনারসি কাপড়ের মজুরি অনেক বেশি। এক সেট থ্রি-পিস বানাতে মজুরি লাগছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন মার্কেট ও স্থান ভেদে এসব মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। শার্ট-প্যান্ট বানানোর মজুরি সামান্য বাড়িয়েছে জেন্টস টেইলার্সগুলো।
টেইলার্স ঘুরে জানা গেল পোশাক বানানোর মজুরি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন কারণে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের ও দোকানভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। বেড়েছে কারিগরদের মজুরি। স্যুয়িং মেশিন, বোতাম, সুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট বাড়িয়েছে। ফলে পোশাক বানানোর মজুরি না বাড়িয়ে ব্যবসা করাটা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানালেন পোশাকের কারিগররা। তবে মজুরি বাড়ানো নিয়ে মধ্যবিত্তদের রয়েছে অভিযোগ। তারা বলছে, ঈদকে সামনে রেখে আরেক দফা মজুরি বাড়ানো সঠিক হয়নি। ঈদে কাপড়ের দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্য সবকিছুর দাম উর্ধমুখী। এ অবস্থায় টেইলার্সের মজুরি বাড়ানো মানে মধ্যবিত্তদের বাড়তি কষ্ট।
/এনএ/