ঈদের ছুটিতে বেড়ানো

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

 

বাংলাদেশে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সম্বলিত স্থানের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারটি অন্যতম। এই ঐতিহাসিক বিহারটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এর আদি নাম সোমপুর বিহার।

এ বিহারটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বিহার।  

হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর বিহারটি আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে সংস্কার, সংরক্ষণ ও পিকনিক কর্নারসহ নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনশীল ও আকর্ষণীয় মূল প্রবেশ দ্বার। প্রবেশ দ্বারের দক্ষিন পার্শ্বের কক্ষে প্রত্নসামগ্রী ও বই কিনতে পাওয়া যাবে। উত্তর পার্শ্বে থাকবে টিকিট কাউন্টার ও মহিলা এবং পুরুষ টয়লেট। নির্মান করা হয়েছে একটি মসজিদ, অফিসার্স কোয়ার্টার ব্যাটেলিয়ানদের জন্য আনসার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, ১০টি দর্শনার্থী ছাউনী। এই ছাউনীগুলিতে পিকনিকসহ দর্শনার্থীরা বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। ছাউনিগুলোর পার্শ্বেই রয়েছে পুরাতন আদলে নির্মিত একটি পুকুর।

পাহারপুড় বৌদ্ধবিহার

এছাড়া পাথওয়ের মনোরোম পরিবেশে নির্মান করা হয়েছে একটি বসার স্থান। রয়েছে গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গা। সাউথ এশিয়া টুরিজম ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধিনে এই কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পিকনিক কর্নার থেকে সরাসরি বৌদ্ধমন্দির প্রবেশ পথে নির্মান করা হচ্ছে একটি ব্রিজ। এছাড়া প্রধান ফটকসহ ভেতরে আরো ৩টি ব্রিজ নির্মান করা হবে। পুরাতন আদলে মন্দিরের সংস্কার কাজ চলছে পুরোদমে। চলমান রয়েছে পুরাতন আদলে বৌদ্ধ মন্দিরের চতুর্দিকে ভিক্ষুক কক্ষ, পঞ্চবেদিসহ সকল স্ট্রাকচারের সংস্কার কাজ। সংরক্ষণের ফলে পাহাড়পুর শুধু দর্শনীয় এবং অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই নয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিশেষ স্থান হিসেবেও দেশে-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে।

নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর অধিদপ্তরের তত্বাবধানে এখানে ১৯৯৩ সালে যাদুঘর তৈরি হয়। ১৯৯৫ সালে সবার জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যাদুঘরে দেখা মিলবে প্রাচীন মুদ্রা, সাড়ে ৩ হাজার পোড়া মাটির ফলক চিত্র, সিলমোহর, পাথরের মূর্তি, শিলালিপি ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহারের নকশা সবচেয়ে সেরা। কারও কারও মতে এখানে একটি জৈন মন্দির ছিল। আর সেই মন্দিরের ওপরেই গড়ে তোলা হয়েছে এ বিহার। এ বিহারের ১৩-১৪ ফুট আকারের মোট ১৭৭টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোর সামনে টানা বারান্দা। উপরে প্রায় ১০ ফুট চওড়া ছাদ। ঐগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার উন্নয়ন ও সংরক্ষন কাজের দায়িত্ব পালনরত  প্রকৌশলী নাজমুল আলম বাংলা ট্রিবিউন কে বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে সাউথ এশিয়ান ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী নভেম্বরের ২০১৬ মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। 

পাহাড়পুর যাদুঘরের কাস্টডিয়ান সাদেকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউন বলেন, পুরাতন আদলে ও আধুনিকায়নভাবে সংষ্কার করা হচ্ছে এই ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহারটি। নতুন করে সংস্কার করা ফলে এই বিহারের ভেতর আর কখনো বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে দেওয়াল নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভবনা নাই। সংষ্কারের পর দুই এক বছর অতিবাহিত হলেই বৌদ্ধবিহারের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক মজিবর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাউথ এশিয়ান ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে (সোমপুর বিহার) পর্যটকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলোর কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই বিহার আরও সমৃদ্ধ হবে। সেই সাথে বাড়বে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের ভিড়।

/এফএএন/