বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি

ঝিনাইদহের ফুল চাষিদের কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা। এ সময় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ, লাভও হয় অনেক বেশি। তাই তোড়জোড় চলছে ফুলের মান ভালো রাখতে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুল চাষিরা।

Jhenidah Flower Photo 12-02-18 (5)

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ফুলের আবাদ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি গ্রামের ২৩৮ একর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। মাঠের পর মাঠ হলুদ গাদা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে এ জেলার ফুল চাষিরা কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে।

এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ, মালা গাঁথা ও করে বিক্রি করার কাজে সাহায্য করেন মেয়েরা। ফলে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে। জাতীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও সারাবছর এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফুল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফুলের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে।

Jhenidah Flower Photo 12-02-18 (1)

কথা হলো জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম ডুমুরতলার চাষী মশিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফুল চাষ দেখে তিনি কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০ শতক জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। বাংলা আশ্বিন মাসে চারা লাগানোর পর ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফুল এসেছে। গত এক সপ্তাহে তিনি ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করেছেন। সার, কীটনাশক, পরিচর্যা বাবদ তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই ২০ শতক জমি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। এতে তার লাভ থাকবে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া এই গাছ যত্ন করে রাখলে বিভিন্ন সময়ে ফুল তুলতে পারবেন।

Jhenidah Flower Photo 12-02-18 (2)
তিনি আরও জানান, দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ গাঁদা ফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। আরেক চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি আগাম গাঁদা ফুল চাষ করে মাত্র ১১ শতক জমি থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। এছাড়া একই গ্রামের মহাসিন, আতিয়ার ও মিজানুর রহমানও তাদের জমিতে ফুল চাষ করেছেন।

ফুলনগরী বলে খ্যাত বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা নাজমা, নুরজাহান, স্বরসতী ও আয়েশা বেগম জানান, বছরের বারো মাসই ফুল তোলার কাজ করেন তারা। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ বেশি করতে হয়। আয় উপার্জনও বেশি হয়। তারা জানান, এখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সকাল বিকাল কাজ করতে হচ্ছে। ব্যাপারিরা ফুল নিতে ফুল মালিকের বাড়ি বসে থাকছে। যে কারণে সবকিছু রেখে সারাদিন ফুল তুলছেন তারা।

Jhenidah Flower Photo 12-02-18 (3)

তারা আরও জানান, প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ফুল মালিক ১০ টাকা করে দেয়। প্রতিদিন তারা ১২ থেকে ১৮ ঝোপা ফুল তুলতে পারেন। অনেকে আবার স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গৃহপালিত পশু কেনেন। এরপর ফুলের কাজ করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। এভাবেই এ এলাকার নারীরা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, এ এলাকার জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট, খড়িকাডাঙ্গা, দৌলতপুর, কাদিরডাঙ্গা, বিনোদপুর, খালকোলা, বালিয়াডাঙ্গা, দাদপুর, ধলা, গোপিনাথপুর, ডুমুরতলা,বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, সদর উপজেলার গান্নাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট গ্রামে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, ফুলের মান ভাল রাখতে চাষিদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।