সব রকমের ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে একজন উদ্যোক্তাকে ঠিক তখনই সফল বলা যেতে পারে যখন উদ্যোক্তা একটি নতুন প্রতিষ্ঠানকে অন্তত তিন থেকে চার বছর সফলভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন। আর তিনি সফলভাবে দুটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন পরিচালনার এবং এক বছর পার করে ফেলেছেন তৃতীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনারও। অসম্ভব মেধাবি আর কাজের প্রতি দক্ষতাই যার পরিচয়। এর বাইরে সঙ্গীত, চিত্রকলা তার আগ্রহের বিষয়। এটিও দক্ষতার জায়গাও বটে।
বলছি টিম ইঞ্জিন এর ফাউন্ডার ও গিগা টেক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরি হিমিকার কথা। যে দেশে অধিকাংশ মানুষ স্বপ্ন দেখে একটা ভালো চাকরির, সেখানে একটা ভালো চাকরি ছেড়ে প্রায় ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল ইউএনডিপি’র মাধ্যমে। এরপর বিবিসির মার্কেটিং ও কমিউনিকেশনের ডেপুটি হেড হিসেবে নির্বাচনী সংলাপ, বিবিসি জানালা, বিবিসি বাজ, বিবিসি ওয়ার্ল্ড ডিবেট ইন ঢাকা, বাংলাদেশ সংলাপ প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্টার্টআপ কাপের সংগঠক; স্টার্টআপ উইকেন্ড ঢাকা, ওয়ার্ল্ড হ্যাকাথনসহ দেশে বিদেশে বিশটির বেশি স্টার্টআপ কর্মসূচির বিচারক, প্রশিক্ষক, আয়োজক এবং বক্তা।
জানতে চাইলাম, নতুন কাজের ঝুঁকি নেয়া বা কাজ শুরু করার ধরন সম্পর্কে। বললেন, ‘যে কোনও নতুন কিছু করার আগেই ভাবি কাজটার ঝুঁকি কতটা। কথা বলে নেই কাছের মানুষের সঙ্গে। আমি জানি, পৃথিবীর আরেকটা মানুষও যদি একটা কাজ করতে পারে, তাহলে সে কাজটাই আমিও করতে পারবো। আর যে কোনও কাজ করার আগে পুরো কাজটা আগে বুঝতে হয়। আমি আগে রিসার্চ করি, সঠিক মানুষ খুঁজে বের করি। যেকোনও কাজে আগে নিজের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে।’
কাজের ব্যাপারে তার নীতিটা বেশ আলাদা। তারা কাজ করেন নিজেদের পছন্দমতো। জানালেন, যে কাজটা করছেন সেটাই তার শখ। ভালো লাগা না থাকলে কাজ করা যায় না।
হিমিকা জানান পরিবারের প্রথম ব্যবসায়ী তিনি। তাই পারিবারিক ব্যবসা দেখার বা সেখান থেকে শেখার সুযোগ তার ছিল না। শিখেছেন কাজ করতে গিয়ে। নিজে ধাক্কা খেয়ে, দেখে, লড়াই করে। সেখান থেকে এখানে আসার পথটা কতটা বন্ধুর ছিল তা অনেকটাই অনুমান করা যায়।
কথা যখন শেষের দিকে, জানালেন একটা মজার তথ্য। প্রত্যক্ষভাবে এখন যেমন সবটা কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন তেমনটা আর পাঁচ বছরের বেশি করার ইচ্ছে নেই। ভাবছেন কাজ ভাগ করে দেওয়ার কথা। তখনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ত্বেই থাকবেন। তবে এভাবে নয়। বোঝাই যাচ্ছে, কাজ নিয়ে আরও বড় কোনও পরিকল্পনা রয়েছে তার কাছে। থাকারই কথা অবশ্য। সফলতার পেছনে নারী বা পুরুষ তো আর থাকে না, থাকে কাজ করার স্পৃহা, সততা আর সাহস। তা যে হিমিকার ভরপুর আছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।