আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যখন আমার ছেলেটা সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে মাত্র তখনকার কথা। স্কুলে এক অনুষ্ঠানে বাচ্চারা বাসা থেকে খাবার বানিয়ে নিয়ে যাবে, ওর মা সুন্দর করে ডোনাট বানিয়ে ছেলের সঙ্গে দিয়ে দিলো। ছেলে বাসায় ফিরে খুব মুখ ভার করে রইলো। অনেক খোঁচাখুঁচির পর বেরুলো যে স্কুলের সবাই বলেছে যে ডোনাট আমেরিকান খাবার, এটা বাংলাদেশের খাবার নয়।আজ বাবা দিবস পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
যদিও স্কুল থেকে আমাদের বলেনি কি ধরনের খাবার নিতে হবে, কিন্ত আমার ছেলের মনে খুব লেগেছিল। সেদিন থেকেই আমার মনে হয়েছে আসলে একটা শিশু যে কিনা নিজের দেশকে সব সময়ই রিপ্রেজেন্ট করতে চায়, তাকে সব সময় সেই সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। আর খাদ্য তো নিজের দেশ, সংস্কৃতি রিপ্রেজেন্ট করার একটা স্বীকৃত জনপ্রিয় মাধ্যম।
আমার মতে নিজের পরিবার, বিশেষ করে প্রবাসে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরকে যে দেশে জন্ম নিয়েছে সেই দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি,সংস্কৃতির পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, গর্ব এমনকি খাবারের প্রতি আগ্রহী করে বাংলাদেশ প্রেমের বীজ বপন করে দেওয়া উচিৎ শিশুকাল থেকেই।
উগ্র জাতীয়তাবাদ নয়, সমতার ভিত্তিতে যেদেশে জন্ম এবং বেড়ে উঠেছে সেই দেশের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বহাল রেখে নিজের পিতৃ এবং মাতৃ ভূমির গৌরব তুলে ধরেই এমন জটিল মানুষিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আমি নিজে যেহেতু পরিবার সমেত বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করি, এই সমস্যায় আমাকেও পড়তে হয়েছে। দুই দেশের দুই রকম সংস্কৃতির মাঝে একটা মেলাবন্ধন বা মালা গাঁথার প্রচেষ্টা সব সময় করে এসেছি। সেই প্রচেষ্টার নানা রূপের একটি বাংলাদেশের খাবার যতোটা সম্ভব সন্তানকে খেতে দিয়ে বাংলাদেশ নামটা তার মস্তিষ্কে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই চেষ্টা খুব একটা সহজ নয়।
যে দেশে থাকি সেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা শতাধিকও নয়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাংলাদেশি কম্যুনিটি গড়ে উঠেনি। তাইতো দেশি রান্নার উপকরণ এখানে এই চেক রিপাবলিকের দুর্লভ মহার্ঘ। সব সমস্যার সমাধান আছে, এটারও আছে। সাতশ কিলোমিটার দূরে ভিয়েনা, বাংলাদেশিদের মেলা যেন। শুটকি থেকে মাটির মটকি সবই পাবেন। তাই ছুটি দিনগুলোতে আমি ছুটি চুটিয়ে বাংলাদেশি পণ্য কিনতে।
আজকের রান্নাটা আমার ছেলের জন্য।
বাদাম-মুরগি
বাদাম মুরগির উপকরণ:
ছোট আকারের মুরগি একটা (হাড়সহ টুকরো করে নিন)
পেঁয়াজ- ২৫০ গ্রাম (কুঁচি করে নিন, বেশি তেলে বাদামী করে ব্লেন্ডারে পিষে পিউরি বানিয়ে রাখুন)
রসুন- ছয় কোয়া (বেটে নিন সম্ভব হলে, আমি ক্র্যাশ করেনিই সবসময়)
আদা বাটা- দুই চা চামচ
গরম মশলা আস্ত
তেজপাতা
ধনিয়ার গুঁড়া- এক চা চামচ
জিরা গুঁড়া- এক চা চামচ
কা^চা মরিচ- চারটা (দুঃখিত আমার বাসায় ছিলো না, তাই ব্যবহার করিনি)
তেল প্রায় এক কাপ (পেঁয়াজ রান্নার জন্য একটু বেশি তেল দেবেন, রান্নার পরে তেল উপরে ভেসে উঠলে স্কিম করলেই তা আর ক্ষতির তেমন কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। আমি কিন্ত দেশ থেকে আনা সরিষার তেল ব্যবহার করেছি)
চিনা বাদাম- পিউরি করা
এক চামচ ঘি/ মাখন
গোলাপ জল- এক চামচ
গোল করে কাটা আলু (ইচ্ছা হলে দিতে পারেন)
কিসমিস-কয়েকটি
পদ্ধতি:
লবণ ও গোল মরিচ মেখে বেশি আঁচে মুরগির মাংস একটু ভেজে নিন।
বাদাম, টকদই, কিসমিস ও কাঁচা মরিচ বাদে সব মশলা তেলে কষিয়ে নিন এবং তাতে মুরগি ছেড়ে দিন। মুরগি প্রায় শুকনো হয়ে এলে বাদাম পিউরি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে এককাপ পানি দিয়ে তাতে আধা কাপ টক দই দিয়ে হালকা আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
খুব ধীরে রান্না হবে এবার। পানি কমে প্রায় মাখামাখি গ্রেভি হলে তাতে কাঁচা মরিচ, কিসমিস দিয়ে আরেকটু নেড়ে দিন। সাবধানে নাড়ুন যাতে মাংস ভেঙ্গে না যায়। এবার ঘি বা বাটার এবং গোলাপজল দিয়ে আরো মিনিট পাঁচেক হালকা আঁচে ঢেকে রাখুন। তেল উপরে উঠে এলে নামিয়ে নিন এবং যদি বেশি তৈলাক্ত মনে হয় চায়ের চামচ দিয়ে কিছুটা তেল ফেলে দিন।
গরম গরম পোলায়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক।