রমানাথ হাজেরার (৪৭) বাড়ি নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামে। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এ পেশায় কাজ শুরু করি। এমন একটা সময় ছিল, রাতে কাজ করেও মানুষের চাহিদা মেটানো যেত না। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশের পরিবর্তে প্লাস্টিকের তৈরি ডালা, কুলা, চাইলন, ধান ও চাল রাখার জন্য পাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার হচ্ছে বেশি। ফলে গ্রামের মানুষের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি ধানের গোলা, ডালি, কুলা, মাছের খলই ও মাছ ধরার পলো, টুশি, বাঁশের তৈরি পাখা ইত্যাদির জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক। হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র ও বিয়ে বাড়ির চাইলোন, বিয়ে বাড়িতে ফোঁড়ন ডোবানোর চালা ও হাত পাখার কদর।’
সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ পশ্চিম পাড়ার অনিল চন্দ্র রায় (৬৫) বলেন, ‘গ্রাম বাংলার বাঁশের তৈরি ঢুলি ও ঢাকি কুলার চাহিদা কমে গেলেও নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে এসব জিনিস পাওয়া যায়। ২৫ বছর ধরে বাঁশ-বেতের ব্যবসা করি। আগে এ পেশার গুরুত্ব ছিল। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে দোন ও ডালির ব্যাপক চাহিদা থাকে। রাতদিন কাজ করেও সামাল দেওয়া যেত না। বিক্রিও ভালোই হতো।’
জেলা শহরের বড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (বাঁশ ও বেত) কানাইলাল (৪৮) বলেন, ‘সংসারের চাহিদা মেটানোর জন্য পরের বাড়িতে দিন-মজুরের কাজ করেও অবসর সময়ে বাঁশের ঢুলি মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র তৈরির কাজ করি।’
নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ৭-১০ দিনের অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নিয়ে যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। তবে, প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের সনদপত্র দেখে সুফলভোগীদের ঋণ দেওয়া হয়। নীলফামারীতে কুটির শিল্পের আওতায় বাঁশ ও বেতের কাজের সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনও প্রশিক্ষক নেই।’
নীলফামারী জেলা সদরের রামনগর, কচুকাটা, টুপামারী, খোকশাবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার মিরগঞ্জ, টেংগনমারী, পাঠানপাড়া দক্ষিণ দেশিবাই, সৈয়দপুরের খাতা মধুপুর, বেলপুকুর ও কামারপুকুর; ডোমার উপজেলার চিকমাটি, সোনারয়সহ অন্যান্য এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি ধানের ঢুলি, মাছ ধরার পলো, খলাই, ঢাকি, কুলা, বিয়ে বাড়ির চাইলন, খাঁচা, দাঁড়িপাল্লা, ডারকি, ঢুশিসহ মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করা হয়।