ইবনে সিনা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সেই বিজ্ঞাপনটির কথা মনে আছে, ‘অযথা বাড়তি খরচ কেন করবেন?’, করোনায় মারা গেছেন সেই ডাক্তার। তার ছেলে ডাক্তার রাফায়েল মুরসালিনের চোখের সামনেই মারা যান বাবা। তার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
বাবা দিবসে এত দুঃখের গল্পগুলো পড়তে স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগবে না। কিন্তু এ বছর দিবসটি একদম ভিন্ন হয়ে এসেছে। নেই কোনো আয়োজন। নেই উপহার কিনে বাবাকে চমকে দেওয়ার প্রস্তুতি। শুধুমাত্র শুভেচ্ছাবার্তায় শেষ হয়ে যাবে এবারের বাবা দিবসের আয়োজন।
কোভিড-১৯ স্তব্ধ করে দিয়েছে আমাদের সব আয়োজন। এ বছর শতশত লাশের সারি কিন্তু বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, কিংবা সন্তানের কাঁধে বাবার লাশের বোঝাটি নেওয়ার ক্ষমতাও নেই। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাবার দাফনে অংশ নেওয়ার সুযোগই তো রাখা হয়নি। আবার সন্তান পায়নি মুখাগ্নির সুযোগ। কী নির্মমতার মধ্যে সময় কাটছে বাবা-মা ও সন্তানদের। আর এই দৃশ্য তো শুধু আমাদের দেশের নয়, সারাবিশ্বের।
তাই আলাদা করে উদযাপন করার সুযোগ হয়তো থাকছে না। কিন্তু একসঙ্গেই ঘরে থাকছি সবার সঙ্গে, চেষ্টা করলে এইসব বিমর্ষ দিন বাবা দিবসকে উপলক্ষ করে কিছুটা আনন্দের হয়ে উঠলেই বা ক্ষতি কী। আমরা পারি তো বাবাকে একবার জড়িয়ে ধরতে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে।
হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন- পৃথিবীতে একটাও খারাপ বাবা নেই। আমাদের মধ্যবিত্ত মন সারাজীবন এই মন্দ বাবা না থাকার গল্পটাকেই বিশ্বাস করে আসতে চেয়েছে। তাই ‘আমার বাবা, সেরা বাবা’ এটি আমাদের জন্য বরাবরই সত্য।
বরাবরই বলে এসেছি বাবা একটি চরিত্র মাত্র। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন মানুষ এই চরিত্রে অভিনয় করে যান। বাবা এমন একজন মানুষ, যিনি তার সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন। ভালোবাসা, নির্ভরতা আর দায়িত্ববোধের বেড়াজালে যে মানুষটা আপনাকে আমাকে বড় করেছেন তিনিই আসলে বাবা। মা একজনই হন- যিনি জন্ম দিয়েছেন। সেই জায়গায় তুলনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাবা অনেকজন হয় বা হতে পারেন।
সাংবাদিক জেসমিন মলি বাবা দিবসের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
‘আজ বাবা দিবস।
আমার পিচ্চি ভাই জন্মের এক বছর সাত মাসে তার বাবাকে হারিয়েছে।
নয় বছর হলো আমি আমার পিচ্চি ভাইয়ের 'বাবা'র দায়িত্বে।’
সময়ের প্রয়োজনে বাবার দেওয়া পরম নির্ভরতা এই ভাই পাচ্ছে বোনের থেকে। ছায়া হয়ে, আশ্রয় হয়ে যেমন করে বাবা রইতেন তেমন করেই আছেন।
আমাদের বাবারা তো শুধু আমাদের ছেড়েই যাচ্ছেন না। লড়াই করছেন। পুলিশ বাবারা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন ডাক্তার, গবেষক বাবারা লড়াই করছেন। কোভিড হাসপাতালে ডিউটি পড়লে টানা ১৫ দিন এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে সময় এক শিশুর সঙ্গে বাবা দেখা করতে আসেন কাঁচের দরজার ওপাশ থেকে। বাবা আর মেয়ে দরজা স্পর্শ করেই আবেগ স্থিমিত রাখে। সেইসব যোদ্ধা বাবাদের জন্যই আজকের বাবা দিবস। যারা জীবনের সব প্রয়োজন বিলিয়ে দিয়েছেন সকাতরে।
এইসব পরম নির্ভরতার বাবাদের বাবা দিবসের শুভেচ্ছা। ক্রমাগত যেসব বাবাকে হারিয়ে ফেলছি, তাদের স্থান অপূরণীয়। কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার আগে বাবাকে কতটা ভালোবাসি তা যেন বলতে পারি। আর যে যেখানেই চলে যাক না কেন, বাবাদের আদর্শ আর ভালোবাসাই হয় সন্তানের পাথেয়।