ফরাসি আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় উত্তাল একাত্তরের দুর্লভ মুহূর্ত

ফরাসি ফটোসাংবাদিক অ্যান ডি হ্যানিংয়ের দুর্লভ সব আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর ‘হিস্টোরি ইন দ্য মেকিং- ফটোগ্রাফস বাই অ্যান ডি হেনিং’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী  কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত  ছিলেন বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি  প্রতিমন্ত্রী  ও সিআরআই এর ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু ও সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাদিয়া সামদানী ও প্রদর্শনীর কিউরেটর রুক্সমিনি রিকভানা কিউ চৌধুরী। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের বর্বরোচিত গণহত্যা বর্হিবিশ্বের সামনে প্রকাশ না করার জন্য কোনও বিদেশী সাংবাদিককে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছিলো না। তখন মাত্র ২৬ বছর বয়সী এক ফরাসি তরুণী সকল ভয় তুচ্ছ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তরুণীর নাম অ্যান ডি হেনিং। তরুণ ফটো সাংবাদিক অ্যান ডি হ্যানিং কাজ করছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে। তখন তিনি জানতে পারেন পাকিস্তানিদের ন্যাক্কারজনক গণহত্যার কথা।

 

বাংলাদেশের মানুষদের আশা, আকাঙ্খা , অসহায়ত্ব, বৈষম্য ও মুক্তির যে দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন তা বর্হিবিশ্বের কাছে তুলে ধরতে অ্যান ডি হেনিং তার ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেন যুদ্ধের ময়দানে। তার ক্যামেরার মাধ্যমে সাক্ষী করে রাখেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের। 

অ্যান ডি হ্যানিং তার ক্যামেরায় তুলে ধরেন কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে পুরুষ, মহিলা এবং শিশু শরণার্থী ট্রেনে চড়ে এবং তাদের গ্রাম থেকে পালিয়ে যায়। তার ক্যামেরায় দেখতে পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা সগর্বে উড়ছে। হ্যানিং ছবিটির শিরোনামে লিখেছেন, ‘আমি যখন ক্যাম্পে প্রথম প্রবেশ করি, তখন মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা আমাকে বলে আপনাকে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাগতম।’ 

১৯৭২ সালের এপ্রিলে স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। হ্যানিং বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে আবারও আসেন এ সময়। অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু মুহূর্ত  হ্যানিং তার ক্যামেরায়  ধারণ করেছিলেন।  ১৯৭৫ সালের ক্যু’র পর বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং অক্ষয় থাকা রঙিন ছবিগুলো এখনও বিদ্যমান আছে। 

জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।