পর্দার বাজারে ঈদের আমেজ

ঘর সাজাতে পর্দার তুলনা নেই। দেশে পর্দার বিকিকিনি সারা বছরই চলে। এবার সেই বেচাবিক্রিতে লেগেছে ঈদের আমেজ। 

ঈদের সময় ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকেই পর্দার দোকানে ভিড় করছেন। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে পাইকারি দরে অন্যান্য জায়গার তুলনায় সুলভ মূল্যে দরজা জানালার পর্দা পাওয়া যায়। এসব পর্দার দোকান থেকে রেডিমেড পর্দা কেনার পাশাপাশি পছন্দমতো কাপড় কিনে  মনের মতো ডিজাইন করেও পর্দা বানানো যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি অনেক ক্রেতাই কিনে নিচ্ছেন নতুন পর্দা। নতুন পোশাকের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ঘর সাজসজ্জার কেনাকাটায় ব্যস্ত এখন নগরবাসী।  

কম দামে ভালোমানের পর্দা পেতে ইসলামপুরের করিম ম্যানশনের বিক্রমপুর পর্দা বিতানে এসেছেন উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা তাবাসসুম। তিনি জানান, ঈদে ঘর সাজাতে পছন্দের পর্দা কিনতেই এখানে এসেছেন। আগের পর্দাগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে বসার ঘরের তিনটি দরজা ও দুটি জানালার ভালো মানের পর্দার কাপড় কিনেছেন। সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ১৭ হাজার টাকা। পছন্দনীয় পর্দার কাপড়ের গজপ্রতি দাম ৭৫০ টাকা। অথচ একই পর্দা অন্যান্য শপিং মলে গিয়ে কিনলে হাজার টাকার বেশি পড়ে যায়। এজন্য ঈদে পর্দা কিনতে এসেছেন তিনি।

ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে বেতন-বোনাস একসঙ্গে পাওয়ায় ঘরের জন্য ইসলামপুর থেকে পর্দা কিনতে এসেছেন শরিফ মির্জা নামের আরেকজন ক্রেতা। তিনি বলেন, 'সবসময় তো এসব কেনার জন্য হাতে টাকা থাকে না। ঈদ উপলক্ষে বোনাস পেলাম তাই ছেলেমেয়ের জামাকাপড়ের সাথে বাসার জানালার জন্য পর্দা কিনে নিলাম। এর আগেও অন্যান্য জায়গায় পর্দা কিনতে চেয়েছি তবে দাম বেশি ছিল। এখানে মোটামুটি সস্তায় পেয়েছি সেই সুযোগে কিনেছি।' 

পর্দার বেচাকেনা সব সময় যে রকম থাকে ঈদের সময়ও একই রকম থাকে। তবে এবার ঈদে বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটি জানিয়েছেন মারিয়া ফেব্রিক্সের কর্মচারী জলিল আহমেদ।

তিনি আরও জানান, মাঝেমধ্যে অনেক বেশি বেচাকেনা হয় আবার মাঝেমধ্যে হয় না। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে যখন শীত বেশি পড়ে তখন বেচাকেনা একটু বাড়ে। তবে কমবেশি সারা বছরই পর্দা বেচাকেনা হয়।

রাজধানীর সুপার শপগুলোর তুলনায় এখানে পাইকারি ও খুচরা কম দামে পর্দা কেনা যায় বিধায় বছরের সব সময় মোটামুটি এখানে বেচাকেনা ভালো থাকে

ইসলামপুরে পর্দার ১৪ থেকে ১৫টি পাইকারি মার্কেট রয়েছে। এর মধ্যে আল মদিনা মার্কেট, প্লাজা মার্কেট, নবাবগঞ্জ ম্যানসন, আমীর ম্যানসন, আহসান মঞ্জিল সুপারমার্কেটে (চায়না মার্কেট) দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্দা রয়েছে।

ইসলামপুরে পর্দার কাপড়ের দাম গজ হিসেবে সর্বনিম্ন ৬৫০ এবং সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়া সোফার কভারের জন্য কাপড়ের দাম ৪৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় মিলবে। বিদেশি পর্দার মধ্যে চায়না জ্যাকেট গজপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা টাকা, তুর্কি পর্দা এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, ইন্দোনেশিয়ান পর্দা ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা, চায়না পর্দা ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, ইন্ডিয়ান পর্দা ৭০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

দরজা-জানালার পর্দা কেনার ক্ষেত্রে বাসার মাপকাঠি ও সৌন্দর্য বুঝে পর্দা কেনার কথা বলেছেন বিক্রমপুর পর্দা বিতানের ম্যানেজার সোহেল রানা। তিনি বলেন, 'বসার ঘরের আকার যদি ছোট হয় ও আলো কম প্রবেশ করে, তাহলে অপেক্ষাকৃত পাতলা ও হালকা রঙের পর্দা কিনতে পারেন। একইসঙ্গে বসার ঘরের সোফার কভারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পর্দা ব্যবহার করলে সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে যায়। যদি সোফার ওয়্যার, কুশন কভার হালকা রঙের হয়, তাহলে একটু উজ্জ্বল রঙের পর্দা লাগানো যেতে পারে।' 

বিক্রমপুর পর্দা বিতানের ম্যানেজার সোহেল রানা উল্লেখ করে বলেন, 'ঘর বড় দেখাতে ও আলো প্রবেশে সুবিধার জন্য সাদা রঙের পর্দা কিনতে চাইলে একেবারেই ধবধবে সাদা না নিয়ে এর ওপর হালকা নীল, নেভি ব্লু, রয়েল ব্লু বা সি ব্লু, বিস্কুট রঙ, খয়েরি রঙের প্রিন্ট রয়েছে—এমন পর্দার কাপড় কিনতে পারেন।'