‘মনে হয় ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৪০ বছর। বয়স নিয়ে বিষণ্ণতা কাজ করে আমার। মনে হয় ৪০ বছর হয়ে গেলেই জীবনের ছন্দপতন শুরু হয়ে যায়। চুলে পাক ধরেছে, ত্বকে বলিরেখা পড়তে শুরু করেছে। এগুলো নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি আমি। মনে হয় ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আর নতুন করে কোনও কাজে আগ্রহ পাই না, এনার্জিও পাই না। হতাশ লাগে খুব। 

উত্তর: আপনি এক্সিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিসে ভুগছেন। মানুষ যখন নিজেকে জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তখন তার মধ্যে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। মানুষের বিবর্তনশীল মস্তিষ্ক, অস্তিত্ব-রক্ষা ও বংশবৃদ্ধির তাগিদে তার ভেতর এরকম একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে যে, সে তার শরীরের চামড়া দ্বারা সীমাবদ্ধ, ক্ষুদ্র, তুচ্ছ এবং অসহায় একটি প্রাণী। একাকী এই জগতে ক্ষণিকের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে আবির্ভূত হয়েছে। বাস্তবতা হলো, ফুলগাছে ফোটা ফুলের মতোই, মানুষ এই জগতের মধ্য থেকে প্রস্ফুটিত হয় এবং সে এই জগতের অপরিহার্য অংশ। নিজের মধ্যে তৈরি হওয়া নেতিবাচক আবেগ-অনুভূতির সাথে যুদ্ধ না করে সেগুলোর অস্তিত্বকে মেনে নিন। মৃত্যুহীন জীবন স্থবির জীবন। জীবন এবং মৃত্যু, দিন এবং রাতের মতোই একে-অপরের পরিপূরক। এদের একটিকে ছাড়া অপরটি অস্তিত্বহীন। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন পূর্ণতা পায়। আমাদের অস্তিত্ব মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলীন হয় না বরং জগৎ এর সাথে একাকার হয়ে যায়। শরীরের বয়স বাড়লেও মনের বয়স বাড়ে না। মনকে চির সতেজ রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের তারুণ্য সবসময় ধরে রাখতে পারি।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৯ বছর, ৩ বছর ধরে বিবাহিত। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। বিবাহিত জীবনে আমি সুখী নই। স্বামীর সঙ্গে অনেক বেশি মতপার্থক্য আমার। এগুলো মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আমি একাই করি, সে করে না। উল্টো সবসময় আমাকে দোষারোপ করতে থাকে। আমার কয়েকজন বন্ধুর ডিভোর্স হয়েছে, সেটা নিয়ে আমাকে খোঁটা দেয় সে। আমার বন্ধুদের ডিভোর্স হয়েছে, তাদের দেখে প্রভাবিত হয়ে আমিও তাকে ডিভোর্স দেবো- এমন ধরনের কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। এ ধরনের সমস্যার কি আদৌ সমাধান আছে?

উত্তর: সুখের অনুভূতি একান্তই নিজের ব্যাপার, নিজের মধ্যেই এটার চর্চা করতে হয়। নিজের সুখকে অন্যদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর ছেড়ে দিলে কষ্টই শুধু বাড়বে। তাছাড়া সুখ এবং দুঃখ উভয়েই জীবনের অপরিচ্ছেদ্য অংশ; একে-অপরের পরিপূরক। কোনও না কোনও ভাবে জীবনের অপরিহার্য দুঃখের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সবাইকেই যেতে হবে। এ কারণে, দুঃখের জন্য নিজের পারিপার্শ্বকে দায়ী করা অর্থহীন। বরং সুখকে আমরা যেমন ভালোবাসি, দুঃখকেও তেমনি আমাদের অপরিহার্য আবেগ হিসেবে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই দুঃখের তীব্রতা কমে যাবে। আমাদের জীবনের সকল সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান আমাদের কারোর জন্যই থাকে না। আপনার দাম্পত্য জীবনের স্থায়িত্ব নিয়ে অগ্রিম জল্পনা-কল্পনা করে লাভ নেই। যে কোনও সমস্যার সমাধান যখন হওয়ার, ঠিক তখনই হবে; আগে বা পরে নয়। আপনার স্বামীর সঙ্গে সম্ভব হলে ঠান্ডা মাথায় খোলামেলাভাবে এসব বিষয়ে কথা বলুন। আপাতত আপনার নিজেকে পছন্দের কোনও কাজে বা পেশায় নিয়োজিত করার চেষ্টা করুন। নতুন সামাজিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলুন, নিজের জন্য সৃজনশীল আপন একটি ভুবন তৈরি করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, মেডিটেশন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। জীবনে ভালো যা কিছু পেয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।