‘চল্লিশে এসে মনে হচ্ছে আমার বিয়ে করা উচিত’

প্রশ্ন: চল্লিশে এসে মনে হচ্ছে আমার বিয়ে করা উচিত। কেমন যেন একাকীত্ব জেঁকে ধরেছে। কিন্তু সামনে আগানোর মতো মনোবল পাচ্ছি না। আশপাশ থেকে সবাই নিরুৎসাহিত করছে। বলছে এখন বয়স্ক কাউকে বিয়ে করতে হবে। আবার যদি সন্তান ধারণ করি তাতেও ঝুঁকি রয়েছে। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

উত্তর: জীবনে যখন আমরা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করি, তখন বুঝতে হবে ওই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার যথাযথ সময় এখনও আসেনি। বিয়ে একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি জীবনে যখন ঘটার, ঠিক তখনই ঘটবে; আগেও না, বা পরেও না। আমাদের জীবন কখনোই আমাদের পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে না। সুতরাং অগ্রিম পরিকল্পনা করে যেমন কোনও লাভ নেই, তেমনি আমাদের অতীতের সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমান কী হয়েছে সেটা নিয়ে ভেবেও কোনও লাভ নেই; যেটা হওয়ার সেটাই হয়েছে, সেটাই হতো এবং সেটাই হবে। আশেপাশের মানুষের কথা না শুনে আপনার মন কী বলে সেটা শুনুন। প্রকৃতির ছন্দের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। দুঃখ-কষ্ট প্রত্যেকের জীবনেই অনিবার্য। দুঃখ এবং সুখ, একে অপরের পরিপূরক। এদের যেকোনো একটি দিয়ে জীবনে কখনও পরিপূর্ণতা আসে না। আমাদেরকে তাই সুখ এবং দুঃখ দুটিকেই জীবনের অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে মনে করতে হবে এবং তাদেরকে সমানভাবে আপন করে নিতে হবে ও ভালোবাসতে হবে। কখনও কখনও আমরা আমাদের কষ্টের জন্য পরিবেশকে দোষারোপ করি, কিন্তু আসলে কষ্টের অভিজ্ঞতা জীবনে প্রাকৃতিক নিয়মেই ক্ষণে ক্ষণে আবির্ভূত হয়।

প্রশ্ন: আমার বাবার চরিত্র ভালো নয়। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে তার প্রেম, বন্ধুত্ব। বেশ কয়েকবার পরকীয়া সংক্রান্ত কারণে বাসায় অনেক অশান্তি হয়েছে। আমার বয়স ১৫ বছর। আমি দিনের পর দিন এসব অশান্তি দেখতে দেখতে মানসিকভাবে একেবারে অসুস্থ হয়ে গেছি। পড়াশোনায় মন বসে না। আবার খারাপ রেজাল্ট করার কারণেও বাবা খুব খারাপ ব্যবহার করে। সব মিলিয়ে মনে হয় সব ছেড়ে কোথাও চলে যাই। কিন্তু এই বয়সে সেটা সম্ভব নয়। মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে কি আদৌ কিছু করা সম্ভব আমার পক্ষে?

উত্তর: পারিবারিক বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি বর্তমানে বিষণ্ণতায় ভুগছেন। নিজের মনের শান্তি কখনোই অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। আমরা যখনই অন্যদের উপর আবেগের দিক থেকে নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, তখনই আমরা তাদের নেতিবাচক আচরণে অথবা তাদের কাছ থেকে প্রশংসা বা ইতিবাচক মূল্যায়ন না পেলে মুষড়ে পরি। বিষণ্ণতার কারণে আমাদের মনোযোগ বা মনঃসংযোগ কমে যায়। এতে আমরা সহজে পড়াশোনা মনে রাখতে পারি না। এ কারণে আপনিও পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ছেন। আমাদের জীবন একটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি খেলার মতো। এখানে নানা রকমের প্রতিকূলতা আসবে এবং আমাদের সেগুলোকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে যে আর কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু যখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যেও নিজেদের পুরোপুরি সমর্পণ করি। আমাদের জন্য যে পরিস্থিতি অপেক্ষা করে থাকুক না কেন, তাকে প্রকৃতির একটি অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার মনস্থির করি, তখন জীবনের অনিশ্চয়তাভরা পথ আমাদের আনন্দ ও উত্তেজনা এনে দেয়। এই সময়ে জীবন আর একঘেঁয়ে মনে হয় না। বিপদকে এড়ানোর চেষ্টা করলে বিপদ কখনোই পিছু ছাড়ে না। কিন্তু যখন আপনি বিপদের মোকাবিলা করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যান, তখন বিপদ নিজে থেকেই আপনাকে এড়াতে থাকে এবং আপনি চাইলেও তখন বিপদের সন্ধান পাবেন না।