‘আমি বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছি’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩১ বছর। আমি খুব অগোছালো স্বভাবের। কাজ গুছিয়ে করতে পারি না। রান্না করতে গেলে আরও এলোমেলো হয়ে যায়। শিশুর খেলনা গোছাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। এগুলো নিয়ে স্বামীর সাথে খুব ঝগড়া হয়। আমি কী করবো?

উত্তর: ১. গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রথমে শুরু করুন: প্রতিদিনের কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং সেগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী সাজান। সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রথমে করুন। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সময়মতো শেষ হবে এবং বাকি কাজগুলো সহজ মনে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নিন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।

২. পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বন্ধ করুন: আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সবকিছু আমাদের ইচ্ছা মতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে, আমাদের উচিত প্রকৃতির ছন্দের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে, আমরা যদি প্রকৃতির স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দিই, তাহলে মানসিক চাপ কমে যাবে এবং আমরা আরও শান্তি ও স্বস্তি অনুভব করব। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে পারব এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। যা হওয়ার সেটাই হবে; আমি চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে।

৩. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমে মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন। এরপর মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশী ভেতরের দিকে টেনে রাখুন, যাতে করে ফুসফুসের গভীর তলদেশ থেকে বাতাস শ্বাসের সাথে বের হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।

৪. গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং করুন: প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান। এটি আপনার শরীরের সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির সংযোগ স্থাপন করবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বড় কোনও গাছের কান্ড জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কাটান। প্রাকৃতিক জলাশয়ে সাঁতার কাটাও একটি চমৎকার উপায়। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরও পুনরুজ্জীবিত ও সতেজ অনুভব করবেন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। আমি বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছি। খুব ক্লান্ত লাগে। চাকরিতে প্রমোশন নেই। বিয়ে করিনি বলে সবখানে হাসির পাত্র হই। কিছু অতীত রয়েছে যা ভুলতে পারি না। সামনে আগাতেও পারি না। খুব হতাশ হয়ে পড়েছি সবকিছু নিয়ে।

উত্তর: ১. নিজের যত্ন নিন: প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন। যা করতে ভালো লাগে, যেমন হাঁটা, বই পড়া বা কোনও শখের কাজ করুন। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, বা সাইকেল চালানো। প্রকৃতির সাথে সময় কাটান। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধঘণ্টা সময় খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন। অথবা দুই হাতের তালু দিয়ে বড় কোনও গাছের কাণ্ড কিছু সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি-হাগিং)।

২. সামাজিক সংযোগ বাড়ান: আপনার প্রিয়জন, পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে যেমন ক্লাব, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সংগঠন, অথবা স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশগ্রহণ করুন। এই ধরনের কার্যক্রম আপনাকে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

৩. আত্ম-উন্নয়নে মনোযোগ দিন: আত্ম-উন্নয়নের জন্য, শরীরচর্চা, মেডিটেশন, বই পড়া, রান্না, অথবা অন্য কোনও আত্মউন্নয়নমূলক কোর্সে অংশগ্রহণ করুন। নতুন কিছু শিখুন, আপনার আগ্রহের কোনও কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন অথবা এমন কাজ করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়। এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিতভাবে এই কাজগুলি করলে আপনি নিজেকে আরও শক্তিশালী ও সুস্থ অনুভব করবেন।

৪. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন: অতিরিক্ত শর্করা রক্তে ও মস্তিষ্কে গ্লুকোজ স্পাইক তৈরি করে। ফলে এডভান্সড গ্লাইকোজেন অ্যান্ড প্রোডাক্টস তৈরি হয় যা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য ‍নষ্ট করে। প্রক্রিয়াজাত শর্করা জাতীয় খাবার, জুস ইত্যাদি পরিহার করুন এবং উচ্চমানের প্রাণিজ আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ইন্টারমিটেনিট ফাস্টিং ও ফ্যাট এডাপটেশন করুন। শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়াতে প্রয়োজনে কোলিক্যালসিফেরোল সাপ্লিমেন্ট নিন।