ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ-এর তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে প্রোটিন দরকার ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, আর তিনি যদি ভারী কোনও কাজ না করেন, তা হলে দিনে তার প্রোটিন দরকার ৬০ গ্রাম। এরচেয়ে বেশি হলেই ম্যাল-অ্যাবসরবশন সিনড্রোম তথা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেবে। ঈদ আয়োজনে নানা ধরনের মাংসের আইটেম থাকে। দাওয়াত থাকে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতেও। ফলে মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন ও তেল মসলার খাবার বেশি খাওয়া হয়ে যায় না চাইতেও। অনেকেই ঈদ পরবর্তী সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এই সমস্যা দূর করতে কয়েক ধরনের বীজ নিয়মিত খেতে পারেন।
বীজ খেলে কেন দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য?
বেশিরভাগ বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে যার উচ্চ ফাইবার এবং রেচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রভাব কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করতে পারে এগুলো। বীজ পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। আবার খেতে পারেন অন্যান্য উপায়েও। জেনে নিন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কোন কোন বীজ খাবেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকর চিয়া বীজ। উচ্চ ফাইবার উপাদান এবং জেল তৈরির বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত এই বীজ। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চিয়া বীজ প্রসারিত হয় এবং জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে যা হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এক গ্লাস পানিতে সাথে ১-২ টেবিল চামচ চিয়া বীজ মিশিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট রেখে দিন। পান করার আগে ভালো করে নাড়ুন। চাইলে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন এতে।
- ফাইবার এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে পরিপূর্ণ ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসির বীজ। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার এটি। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অন্ত্রকে লুব্রিকেট করতে সাহায্য করে, যার ফলে মলত্যাগ করা সহজ হয়। পাউডারের মতো মিহি গুঁড়া করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন এই বীজ। আবার সিরিয়াল, দই বা সালাদে ছিটিয়েও খেতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তিলের বীজ খুবই কার্যকর। সিরিয়াল বা সালাদের সাথে খেতে পারেন তিলের বীজ। এছাড়া গুঁড়ো করে স্ন্যাকসের উপর ছিটিয়েও খাওয়া যায়।
- সাইলিয়াম বীজ বা ইসুবগুল প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে। এগুলোতে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা অন্ত্রে ফুলে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানির সাথে ১-২ চা চামচ ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে ভালো করে নাড়ুন এবং সঙ্গে সঙ্গে পান করুন। নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।
- মেথি বীজ হজমে সহায়তা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এই বীজে মিউকিলাজিনাস বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার অর্থ তারা অন্ত্র তৈলাক্ত করতে সাহায্য করে। ১-২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারারাত এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে এটি পান করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আরও কিছু পরামর্শ জেনে নিন
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটলেও উপকার পাওয়া যায়।
- অত্যাধিক মাংস খাওয়া যাবে না। দিনে ১০০-১৫০ গ্রামের বেশি না খাওয়াই ভালো।
- কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে পুদিনা চা বা আদা চায়ের মতো ভেষজ চা পান করতে পারেন।
- যেদিন বেশি মাংস খাওয়া হবে, সেদিন সঙ্গে শাক-সবজি, গাজর, শসা এসবও মেন্যুতে রাখবেন।
- দইয়ের মতো প্রিবায়োটিক খান। এগুলো অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, মেডিক্যাল নিউজ টুডে