ওজন কমানোর ক্ষেত্রে পেশীর ক্ষতি হলো অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। খুব দ্রুত ওজন কমালে অথবা ঠিক মতো খাবার না খেলে কেবল চর্বির পরিবর্তে পেশি পোড়াতে শুরু করে। পেশি আমাদের বিপাককে শক্তিশালী রাখে এবং আরও ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে কিংবা অতিরিক্ত ডায়েট করলে পেশির ক্ষয় বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্য হারে।
সম্প্রতি একটি কোরিয়ান ডায়েট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এই ডায়েট পেশির ক্ষয় না করেই চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। ডা. পার্ক ইয়ং-উ-এর ডিজাইন করা সুইচ-অন ডায়েটটি অনেকেই গ্রহণ করছেন। কোরিয়ান সুইচ-অন ডায়েট আসলে কী?
সহজ ভাষায়, এটি আপনার খাওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন করার উপর জোর দেয়। কেবল ক্যালোরি কমানো নয়, পেশি সংরক্ষণের সময় শরীরের চর্বি কমানোর জন্য সঠিক ধরনের খাবারের উপর মনোযোগ দেওয়াই এই ডায়েটের মূল কথা। এই ডায়েটের মূলে রয়েছে চর্বি কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার, যেমন চর্বিহীন প্রোটিন (মুরগির মাংস, মাছ), শাকসবজি এবং মিষ্টি আলু বা বাদামী ভাতের মতো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট। ডায়েটটি গাঁজনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়, যা কেবল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যই নয় বরং সামগ্রিক হজমের জন্যও ভালো। এই খাবারগুলো আপনার বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে, পেট ফাঁপা কমাতে এবং অলসতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। জেনে নিন কীভাবে কোরিয়ান সুইচ-অন ডায়েট অনুসরণ করবেন।
প্রথম সপ্তাহে প্রোটিন গ্রহণ এবং ব্যায়ামের উপর মনোযোগ দিন
প্রথম সপ্তাহে দিনে ৪ বার প্রোটিন পানীয় পান করার উপর মনোযোগ দিন, সকালে খালি পেটে প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন এবং দিনে ৬০ মিনিট হাঁটুন। ৩ দিন পর দিনে ৩ বার প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন।
দ্বিতীয় সপ্তাহে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন
দ্বিতীয় সপ্তাহ সকালে এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিয়ে শুরু করুন দিন। দিনে দুইবার প্রোটিন পানীয় খান। সপ্তাহে একবার ২৪ ঘন্টার জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন। মধ্যরাত থেকে শুরু করে ২৪ ঘন্টা ফাস্টিং করবেন না। বরং রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত ফাস্টিং করুন। এরপর স্বাভাবিকভাবে রাতের খাবার খান। উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম এড়িয়ে চলবেন ফাস্টিংয়ের সময়। ফাস্টিংয়ের পর কম কার্বোহাইড্রেট খাবেন।
দুইবার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন তৃতীয় সপ্তাহে
তৃতীয় সপ্তাহে ২৪ ঘন্টা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন, তবে টানা দুই দিন নয়। পেশীর ক্ষয় রোধ করার জন্য ফাস্টিংয়ের পরে উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। তৃতীয় সপ্তাহ শেষ করার পরে, যদি আপনার পেশী ভর আপনি যেদিন ডায়েট শুরু করেছিলেন সেই দিনের স্তরে ফিরে আসে, তাহলে চতুর্থ সপ্তাহের ডায়েট শুরু করুন। যদি না হয়, তাহলে আবার প্রথম থেকে করুন।
চতুর্থ সপ্তাহে সপ্তাহে তিনবার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন
ডায়েটের শেষ সপ্তাহে, দুপুরে এবং রাতে কম কার্বযুক্ত খাবার খাবেন এবং দিনে দুইবার প্রোটিন সমৃদ্ধ পানীয় পান করবেন। সপ্তাহে তিনবার ২৪ ঘন্টা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন, কিন্তু পরপর করবেন না।
কিছু পরামর্শ জেনে নিন
সকালের নাস্তায় উচ্চমানের প্রোটিন রাখুন। স্ক্র্যাম্বলড ডিম, প্রোটিন পাউডারযুক্ত স্মুদি অথবা ফল বা বাদাম খেতে পারেন। এগুলো দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, শক্তি দেয় এবং চর্বি পোড়ানোর সময় পেশী ক্ষয় রোধ করে।
দুপুরে গাঁজনযুক্ত খাবার যেমন দই রাখতে পারেন। দুপুরের খাবারের সাথে এক বাটি রায়তা বা দই হজমে সাহায্য করবে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। খাবারে স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করুন। সালাদে এক ফোঁটা জলপাই তেল বা এক মুঠো বাদাম ছড়িয়ে দিতে পারেন। এক টুকরো গ্রিলড চিকেন কিংবা সেদ্ধ ডিম রাখুন খাদ্য তালিকায়।
কোমল পানীয়, স্ন্যাকস, ক্যান্ডি এবং ডেজার্টের মতো চিনিযুক্ত পণ্য খাবেন না। সেই সাথে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত দুধ বা সয়া দুধ এড়িয়ে চলুন। রুটি, কেক এবং পাস্তার মতো ময়দাযুক্ত খাবারও কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রথম সপ্তাহে ক্যাফেইন সীমিত করলেও দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে ব্ল্যাক কফি খেতে পারেন।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া