‘একজনকে আমার বেশি দিন ভালো লাগে না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। বিয়ে করেছি ৫ বছর আগে, প্রেমের বিয়ে। স্বামী বিয়ের পর বদলে গেছে বেশ। আগে যেসব স্বভাব দেখিনি এখন সেগুলো দেখছি আর অবাক হচ্ছি। যেমন আমার অগোচরে আমার ইনবক্স চেক করা, আমার ছেলে কলিগদের নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করা ইত্যাদি। সমস্যাগুলো এমন যে সংসার ভেঙে ফেলাও যায় না, আবার সহ্য করাও যায় না। আমি অনেকবার কথা বলতে চেয়েছি, জানতে চেয়েছি কেন এমন করছে। আমাকে সন্দেহ করার মতো কিছুই নেই। সেও স্পেসিফিক কিছু বলতে পারে না। কিন্তু স্বভাবও যাচ্ছে না। কী করবো?

উত্তর: ১. সন্দেহের কারণ খুঁজুন: কারো অগোচরে তার ইনবক্স চেক করা নিঃসন্দেহে একটি অভদ্রোচিত আচরণ। আমাদের সংস্কৃতিতে বর্তমানে পারস্পারিক বিশ্বস্ততা এবং সম্পর্কের দৃঢ়তা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় সঙ্গীকে অকারণে সন্দেহ করা এবং তার ডিভাইস চেক করা একটি সাধারন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার স্বামীর নিজের বা তার কোন আপনজনের অতীত জীবনে কারো দ্বারা বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকলে উনার মধ্যে আপনাকে নিয়ে সন্দেহপ্রবণতা তৈরি হতে পারে। তবে অন্যের বা অন্যান্য বিষয়েও তার সন্দেহপ্রবণতা আছে কিনা তা লক্ষ্য করতে হবে।

২. আপনার স্বামীর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করুন: সন্দেহপ্রবণতা কারো ব্যক্তিত্বের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিদ্যমান থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তার সন্দেহপ্রবণতা কমাতে পারেন। একজন কাউন্সেলর আপনার স্বামীকে আবেগগত সমর্থন দিতে পারেন এবং তার সন্দেহপ্রবণতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করতে পারেন। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আপনার স্বামী তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারেন এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে পারেন, যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।

৩. আপনার স্বামীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করুন: আপনার স্বামীর মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। উনি আত্ম-সহায়তা বই, মনোযোগ বা নিঃশ্বাসের ব্যায়াম, অন্যান্য ব্যায়াম, সাঁতার বা মেডিটেশনের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। আপনার স্বামীর মধ্যে যদি উনার সন্দেহপ্রবণতা নিয়ে অনুশোচনা তৈরি হয় তাহলে তাকে বলুন, উনি যেন উনার চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে নিজের চরিত্রের সকল বৈশিষ্ট্যকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন।

৪. বিশেষজ্ঞ পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করুন: বিশেষ ধরনের মনোরোগ যেমন, ডিলিউশনাল ডিজর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া এবং মাদকাসক্তির কারণেও কারোর মধ্যে সন্দেহপ্রবণতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীকে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এন্টিসাইকোটিক মেডিসিন খেতে হবে অথবা নন-ইনভেসিভ ফিজিওথেরাপি যেমন ট্রান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন নিতে হবে।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭ বছর। ফেসবুকে একজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, সেটা ভেঙে গেছে। এরপর আমি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়ের সাথে কথা বলি। সমস্যা হচ্ছে একজনকে আমার বেশি দিন ভালো লাগে না। কিছুদিন পর সম্পর্ক থেকে সব আগ্রহ চলে যায়। এটা কি কোনও মানসিক সমস্যা?

উত্তর: ১. আপনার ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করুন: আপনার মন বৈচিত্র্যপিয়াসী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে অল্প দিনেই আপনি পুরনো প্রেমিকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। আবার আপনার আবেগ প্রকাশে ঘাটতি থাকলেও তা আপনাকে প্রেমিকার সঙ্গে আবেগগতভাবে সংযুক্ত হতে বাধা দিতে পারে। তাছাড়া আপনার প্রেমিকার প্রতি আপনার প্রত্যাশা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটাও বিবেচনা করুন। আপনার মধ্যে নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী মনে করার প্রবণতা থাকলেও আপনি প্রেমিকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

২. ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারে সতর্ক হোন: ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার অনেকটা নেশার মতোই। এখানে অনেক রকমের বিকল্প থাকায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি হয়। মনে হয় আরও সার্চ করলে হয়তো এর চেয়ে ভালো কাউকে পাওয়া সম্ভব ছিল। এসব কারণে প্রেমিকাকে শুধুমাত্র একটি অপশন হিসেবে মনে হয়। ফলে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তৈরি হয় না। আপনার মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলে এ ধরনের আসক্তি সৃষ্টি হতে পারে।

৩. সঙ্গী নির্বাচনে যত্নশীল হোন: আপনার এবং আপনার সম্ভাব্য সঙ্গীর মূল্যবোধ এবং জীবনের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে মিল আছে কিনা যাচাই করুন। আপনার সঙ্গী আপনার সামাজিক পরিবেশে বা আপনি তার পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারেন কিনা সেটাও বিবেচনা করুন। পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ও শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করে। দুজনের মধ্যে এসবের মাত্রায় ঘাটতি থাকলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আপনারা একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন কিনা বিবেচনা করুন। ভালো শ্রোতা হওয়া সম্পর্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. নিজের বৈশিষ্ট্যকে আপন মনে করুন: আপনার চরিত্র ও মননের তথাকথিত ভালো ও মন্দ সকল বৈশিষ্ট্যকে সম্মান করুন, ভালোবাসুন, আপন মনে করুন। নিজের সকল বৈশিষ্ট্যকে আপন মনে করা মানে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা। প্রতিটি মানুষের চরিত্র ও মননের মধ্যে ভালো এবং মন্দ উভয় দিকই বর্তমান থাকে। আঙুলের ছাপের মতোই এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা তাকে অনন্য করে তোলে।