বিকেল গড়িয়ে গেছে। আমরা বের হলাম মালনিছড়া চা বাগানে যাব বলে। উদ্দেশ্য সন্ধ্যার পর চা বাগানে ঘোরাঘুরি। দিনের আলোয় চা বাগানের সৌন্দর্য তো অনেক দেখা হলো, এবার রাতের চা বাগান কেমন দেখায় সেটাই দেখব। দল বেশ ভারি। দেবাশীষ দেবু, প্রত্যুষ তালুকদার, বিনয় ভদ্র, রাজীব রাসেল, গৌতম, দিদার, সুমি ও শিমু আগে থেকেই তৈরি ছিল। শেষ মুহূর্তে যোগ দিলেন অমিত আর বাতিন ভাই। এই মালনিছড়া চা বাগান ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশের বাণিজ্যিক চা উৎপাদনের শুরুটা এ বাগান থেকেই। আমরা অনেকবার এসেছি এই বাগানে আর আকারে আকৃতিতেও বিশাল বলে এই অ্যাডভেঞ্চারের জন্য মালনিছড়াকেই আমরা বেছে নিয়েছি ।
সিলেট শহরের খুব কাছেই মালনিছড়া। পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আম্বরখানা বড়বাজারে একত্রিত হলাম। তিনটি মোটরবাইক আর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে বিমানবন্দর সড়ক ধরে এগিয়ে চলেছি। লাক্কাতুরা চা বাগানকে পাশ কাটিয়ে মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম মালনিছড়া চা বাগানের কারখানার মূল ফটকের সামনে। আমরা একটু দাঁড়ালাম কিছু শুকনো খাবার আর পানি নেব বলে । হুট করেই বিনয় ভদ্র নতুন একটি প্রস্তাব দিয়ে বসল। হারং হুরং নামে একটি প্রাচীন সুড়ঙ্গ আছে এই বাগানের গহীনে। সেখানে যাওয়া যায়। এ জীবনে সুড়ঙ্গ দেখিনি। আমরা ঘাড় নেয়ে সায় দিলাম। বাইরে সূর্য অস্তগামী হলেও চা বাগানে ইতোমধ্যে আঁধার নেমে এসেছে। হারং হুরং-এর পথ আমাদের চেনা নেই কারও। সন্ধ্যা বেলায় টিলাময় চা বাগানের ভেতরে অচেনা সুড়ঙ্গ খুঁজে বের করা ভীষণ মুশকিল। প্রায় ৫ কিলোমিটার উঁচুনিচু পথ আমরা পেরিয়ে এলাম। হিলুয়াছড়া অতিক্রম করে এলাম। রাতের শুরুতেই গভীর রাতের মতো আবহ। একেবারে শুনশান চারদিক। পথের মাঝে দু’একজন চা শ্রমিক ছাড়া আর কোন জনমানব নেই। এখন চা শ্রমিকরাই একমাত্র ভরসা । বাতিন ভাইয়ের বাইকের পেছনে সুজন নামের একজন চা শ্রমিককে নিয়ে নিলাম আমরা। কিছু দূর এগিয়ে সুজন বলল সামনের পথটুকু হেঁটে যেতে হবে!
চলে আসুন সিলেটের এই ঐতিহাসিক সুড়ঙ্গে। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে নিশ্চয়ই। ঢাকা থেকে সিলেটে এসে আম্বরখানা থেকে অটোরিকশায় এখানে আসা যায়। গাইড হিসেবে একজন চা শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে নেবেন।
ছবি: লেখক
/এনএ/