ভালোবাসার রঙ চিনুন

ভালোবাসার রঙ কী? লাল? এই দিনে লাল গোলাপ নেবেন, লাল টুকটুকে শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে রঙিন ভালোবাসায় উদযাপন করবেন? ভালোবাসার রঙ আসলে কী? বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, একেক বয়সে ভালোবাসার রঙ একেক রকম। মনোরোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, রঙ বদলালে সেই মতো নিজেকে প্রস্তুতও রাখতে হয়। সময়ের সঙ্গে ভালোবাসার রঙ বদলায়, কেবল রঙটা চিনে নিতে জানলে জটিলতা থাকে না। আর সবার ওপরে হলো—অন্যের অসুবিধে না করে নিজেকে ভালোবাসতে জানতে হবে।

একেক বয়সে ভালোবাসার রঙ, ধরন বদলায় কিনা কিংবা সেটা বুঝে সম্পর্ক চর্চা করতে শিখলে জীবনের জটিলতা কমে কিনা প্রশ্নে সাংবাদিক নাজনীন মুন্নী বলেন, ‘পরিবর্তন মেনে নিতে পারলে জীবন সুন্দর। না নিতে পারলে জটিল ও কষ্টকর। সংখ্যায় অনেক নগণ্য হলেও আজীবন ভালোবাসার একই রং ধরে রাখতে পারে এমন মানুষও আছে। তাদের সুখি মানুষ বলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভালোবাসা একটা তীব্র অনুভূতি। সেটা দিন গড়ালে কখনও মায়া তৈরি করে, কখনও দায়িত্বে রূপ নেয়, সংসারে রূপ নেয়, কখনও বিচ্ছেদে রূপ নেয়। ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে যখন সংসার, তখন তাকে সংসারের মানুষ হিসেবে মেনে নেওয়াই শ্রেয়। তার মধ্যে প্রেমিক খুঁজতে যাওয়া বিপত্তি বইকি! তুমুল প্রেমে পড়ে সংসার করা মানুষকেও আমি দেখেছি নতুনভাবে কাউকে ভালোবাসতে। কারণ মানুষ আসলে ভালোবাসার তীব্রতা চায়। এর ফিকে হয়ে যাওয়া বা বদলে যাওয়াটা সে নিতে পারে না। যেমন দেখবেন মা-সন্তানের ভালোবাসা কখনও বদলায় না। কিন্তু নরনারীর ভালোবাসায় অনেক চড়াই উৎরাই।’

আসলেই কি তাই? নাকি বয়স অনুযায়ী ভালোবাসার রঙ ঢঙ বদলে যাওয়া নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করাটা জরুরি? এ প্রশ্নে শিক্ষক ও সাভেরী ক্লদিং লাইনের সত্ত্বাধিকারী কাকলী তানভীর বলেন, ‘সময়ের সাথে সাথে দেখার চোখ পাল্টে যায়। প্রতিটি মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো একেবারেই ভিন্ন। এসব অভিজ্ঞতার মূল্য তো রয়েছেই। সুতরাং এক সময়ের আবেগ আর অনুভূতির প্রকাশ অন্য সময়ে এসে আলাদাভাবে প্রকাশ হয়, উদযাপিত হয়। সুতরাং এই পরিবর্তনগুলো মেনে নেওয়া জরুরি। তাহলে যেমন একে অপরকে বোঝা সহজ হয়, তেমনি অন্যের আবেগের প্রতি সম্মান দেখানোটাও অভ্যাসে দাঁড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভালোবাসার প্রকাশ তো পাল্টাবেই। এ সত্য মানলে সম্পর্ক অনেক সহজ হয়। অন্যকে বুঝতে পারাটা জীবনে জরুরি বিষয়। এতে করে একা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম বটে। নতুবা দূরত্ব একটা সময় অলঙ্ঘনীয় হয়ে ওঠে। নিজেকে ‘ভালোবাসা’ নিয়ে আমার একটু ভিন্ন ভাবনা আছে। নিজেকে ভালোবাসতে তো একেক জন একেক রকম কিছু বেছে নেন। তবে আমার কাছে আমার জীবনে যুক্ত মানুষদের ভালো রাখতে পারাটাই নিজেকে ভালো রাখার উপায়। আর নিজের ভালোবাসার জায়গা আমার শাড়ির দোকানটা। এ কাজটা আমি ভালোবেসেই করি, আনন্দ আর প্রেরণা জোগায়।’

মনোরোগ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বয়সের সাথে সব কিছুর পরিবর্তন হয়। বাস্তবতা বদলায়, পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। এসবইতো ব্যক্তির পারিপার্শ্বিকতার ওপর নির্ভর করে। ভালোবাসার সম্পর্কগুলো চর্চার ব্যাপার। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে বোঝাপড়া দরকার। মানসিক পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য নিজের প্রস্তুতি থাকাটা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পর্কের জটিলতায় মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সেসব যেন না হয়, সেজন্য মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সিলিংয়ের সুযোগটা নিতে হবে।’