আবার এসেছে আশার ‘আষাঢ়’

বাংলা ক্যালেন্ডারে আজ পয়লা আষাঢ়। বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ আর চারপাশে ছড়িয়ে আছে জলজ ছাপ। দিন গণনার হিসাবে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। শুরু হচ্ছে বাঙালির বর্ষা ঋতু। গরমে হাঁসফাঁসের দিনগুলো পার হয়ে এলো আশার ‘আষাঢ়’।

অবশ্য ক্যালেন্ডারের পাতায় আষাঢ় আসার দিন-কিছু আগেই প্রকৃতিতে উঁকি দেয়। ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ তাই একটু আগেই ফুটে যায়। কদমের ডালগুলো এখন ভরে আছে শত শত সরস তাজা ফুলে। আর হিজলের ডালগুলো তো আগেই ফুল ঝরিয়ে আষাঢ়ের উঁকি দেওয়া কপালে আগমনী সিঁদুর পরিয়ে রেখেছে।

এই আষাঢ়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে পথিকেরা আশ্রয় খুঁজে পাতাজড়ানো গাছগুলোর ডানার নিচে। আষাঢ়ের ভেজা হাওয়া শীতল করে প্রাণ-প্রকৃতিকে। ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষা দাগ রেখে যায় সবখানে।

দিনটিকে নিয়ে পদ্মাপাড়ের শিলাইদহের কুঠিতে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বর্ষার নব রাজ্যাভিষেক বেশ রীতিমত আড়ম্বরের সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে গেছে। দিনের বেলাটা খুব গরম হয়ে বিকেলের দিকে ভারী ঘনঘটা মেঘ করে এল। ...বর্ষার প্রথম দিনটা, আজ বরঞ্চ ভেজাও ভালো- তবু অন্ধকূপের মধ্যে দিনযাপন করব না—।’ রবীন্দ্রনাথ এই আষাঢ়কে ‘ভারতবর্ষের বর্ষার চিরকালীন প্রথম দিন’ বলে অভিধা দিয়েছেন।

ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস মিলিয়ে বাংলায় বর্ষাকাল। বছরের প্রায় ৮০ ভাগ বৃষ্টিই হয় বর্ষায়। যদিও সাহিত্যে বর্ষার অনাবিল যে রূপটি পাওয়া যায় আজকাল তার অনেকটাই বদলে গেছে। খোলা সবকিছুই আজকে যেন ঢাকা পড়েছে। গত কয়েক দশকে মাঠ-প্রান্তর কমেছে, সংকুচিত হয়েছে নদী-খাল। এর কিছু আবার চিরতরে হারিয়েও গেছে। তাই গত শতকের প্রজন্মের শৈশব না ভোলা মানুষগুলোর মন আষাঢ়ের দিনগুলোতে ব্যাকুলতায় ভরে ওঠে। জল-কাদায় মাখামাখির দুরন্তপনার সেই শৈশব এখন অল্পই টিকে বাংলার নিভৃত পল্লীতে।

ইট-কংক্রিটের নগরে বর্ষার প্রকৃত রূপটা ধরার উপায় সামান্যই। উঁচু ভবনের ছাদ কিংবা কয়েক ফুটের বারান্দা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁটের স্পর্শই যেন নাগরিক জীবনে বর্ষার শীতল আমেজটা উপলব্ধির একমাত্র জায়গা। কর্মব্যস্ত নগরজীবনে বৃষ্টি যেন জলাবদ্ধতার ভয়ে ঝুট-ঝামেলারও!

আষাঢ় আবার আমাদের ‘আষাঢ়ে গল্পে’রও দিন। বাংলার গ্রামীণ জনপদে বর্ষার আসার আগেই ধানকাটা শেষ হয়ে যায়। কৃষিনির্ভর জনপদে তখন বর্ষা বলতে গেলে অলস সময় কাটানোর এক ঋতু। ঝুম বৃষ্টিতে সেখানে জমে উঠে অদ্ভুত সব গল্প।

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিনের প্রার্থনা- এই আষাঢ় হোক ভরসার।