আষাঢ়ের কদম গাছেই থাকুক

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, কিংবা বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। আবার জাতীয় কবি কাজী নজরুলের দোলে শিহরে কদম, বিদরে কেয়া, নামিলো দেয়া। আষাঢ়ের প্রথম দিন মানেই ইউটিউবে বেজে ওঠা বৃষ্টির গান। হাতে একগোছা কদম নিয়ে বরষার এমন শোভা অনুভব করতে চান না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। পরিবেশবিদরা অবশ্য বলছেন, বাদল ঝরলে ঝরুক, কদম যেন গাছেই থাকে, হাতে নয়।

ভাদ্রে যখন গাছে গাছে ফল থাকে না, তখন পাখিদের খাবারের আকাল চলে। কদমই তখন অনেক পাখির প্রধান আহার হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বাদুড় ও কাঠবিড়ালির জন্য।

ওরাই গাছের বীজ ছড়ানোর বাহন। তাই ফুল যদি আগেই ছিঁড়ে ফেলা হয়, তবে পাখিরা খাবার পাবে না।

একেকটি কদম ফুলে থাকে প্রায় আট হাজার বীজ। পাকলে সেটা পাখি, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাবার। তখন বীজটাও ছড়ায়।

একটা সময় ছিল, যখন ঢাকার একেকটি রাস্তার একেক বৈশিষ্ট্য ছিল। একেক বাস্তায় ছিল একেক জাতের গাছ। কদমের রাস্তা হিসেবে পরিচিত ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। দিনে দিনে হারিয়ে গেছে সেই সব গাছ।

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে গাছ লাগাই। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় ও নির্দেশনা রয়েছে। আমি আপনাদের বিভিন্নভাবে অনুরোধ করবো, নজরে আনবো। আপনারা যদি কদম গাছ লাগান, এটা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। কদম ফুল গাছে যে জৈব বিষয় রয়েছে, যেটা মশা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেখানে যে একটি নির্দিষ্ট পাখি, ফিঙে পাখি থাকে ও বাসা বাঁধে, সেটাও মশক নিধনে সহায়ক।

কদম পাকলে সেটা পাখি, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাবার, ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জসিমউদ্দিন বলেন, মানুষের তুলনায় কদম গাছের সংখ্যা কম। ঢাকায় কদম বলতে দু-চারটা পার্কে যেগুলো আছে। দেখা পাওয়া কঠিন। লেকগুলোর পাড়ে আছে কয়েকটা। যে মাত্রায় থাকা দরকার দেশি গাছ হিসেবে, সেই মাত্রায় খুবই কম।

ফুল বিক্রি করে দিলে বন্যপ্রাণী, মৌমাছির খাবার, কীটপতঙ্গ যারা কদম ফুলের সঙ্গে জড়িত, তারা আক্রান্ত হবে। যেহেতু গাছ কম, তাই ফুলগুলো ছিড়ে বিক্রি না করে গাছের সংখ্যা বাড়ানো যায় কিনা সেদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। কৃষ্টি কালচার, গল্প-গানে যে ফুল জড়িত সেটা বিলুপ্ত করা উচিত হবে না।