তাঁর কবিতা যেন সংলাপ হয়ে যেত

সৈয়দ শামসুল হক। ছবি- সাজ্জাদ

আমাদের সময়ের প্রতিভাবান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন। আমাদের সকলের ইচ্ছা এবং ভালোবাসা তাঁকে ধরে রাখতে পারলো না। তবে তাঁর এই যাত্রার ধ্বনি সমকাল শুনবে। মহাকালে বাজবে।

খুবই রাজকীয় এই যাত্রায় জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি তাঁর মস্তিষ্ক সক্রিয় রেখেছেন এবং এমন একটা ধারণা সকলকে দিয়ে গেছেন যেন তিনি তাঁর তারুণ্যেই আছেন। তিনি জরাকে জয় করেছেন, ভয়কে পরাস্ত করেছেন এবং তাঁর নূরুলদীনের মতো সবাইকে জাগরণের ডাক দিয়েছেন।

অসম্ভব সৃষ্টিমুখর ছিল তাঁর জীবন। যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই তিনি সোনা ফলিয়েছেন। মঞ্চ নাটক থেকে অনুবাদ নাটক, কবিতা থেকে কাব্যনাটক, গান থেকে প্রবন্ধ, ছোটগল্প থেকে উপন্যাস; এমনকি চিত্রকলা চর্চা- সাহিত্যের সবক্ষেত্রেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করেছেন। চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের জন্য তিনি অপরিহার্য ছিলেন। আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে।

তাঁর সঙ্গে আমার- আমার কেনো, বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত সবার অনেক অনেক স্মৃতি আছে। তাঁর কথা বলার ধরন, উচ্চারণ আমাদের মুগ্ধ করে। একজন লেখকের জীবন-যাপন কেমন হওয়া উচিত তা তাকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারতাম না। তিনি যখন মঞ্চে কবিতা পড়তে দাঁড়াতেন, মনে হতো একজন দক্ষ অভিনেতা দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কবিতা যেন সংলাপ হয়ে যেত।    

তিনি যে শূন্যস্থান রেখে গেছেন তা কখনো পূর্ণ হবে না। তাঁর অভাব আমরা চিরদিনই বোধ করবো। তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম





লেখক: শিক্ষক, সাহিত্যিক