বেলাল নেই, মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে : স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়

noname

সুনীলের সঙ্গে বেলালের খুব বন্ধুত্ব ছিল। বেলাল আমাদের বিয়েতেও এসেছিল। ও তখন কলকাতায় থাকত। ওর মা ওকে খুব ভালোবাসত। মায়ের প্রিয় ছেলে ছিল বেলাল। মা স্বাভাবিকভাবেই ছেলেকে খুব মিস করত। কলকাতায় বেলালের তো কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না। বেলালের মা ছেলের জন্য একটি দীর্ঘ চিঠি পাঠিয়েছিল সুনীলকে। সুনীল সেটা বেলালকে পড়ায়। বেলালও সেই চিঠি পড়ে দুদিনের মধ্যে মায়ের কাছে ফিরে যায়।

বেলাল খুব বড় মনের মানুষ ছিল। সেজন্যই বোধ হয় সুনীল-বেলাল অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছিল। দুজনের মধ্যেই কোনো জাতপাতের গোঁড়ামি ছিল না। একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসত। সুনীল বেলালের কথা কোনো দিন ফেলতে পারত না। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বেলাল কোনো কাজ দিলে সেটাই আগে করত। আমরা বহুবার বেলালের ডাকে বাংলাদেশে গিয়েছি। বেলাল আড্ডাবাজ হলেও অনেকের মধ্যে একা হয়ে যেতে ভালোবাসত। একবার ঢাকায় একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি, সবাই অপেক্ষা করে আছে ওঁর জন্য, কিন্তু শেষ অব্দি বেলাল আর অনুষ্ঠানে এলো না।

শুনেছি, কলকাতার থাকার সময় বেলাল মাঝেমধ্যে পার্ক সার্কাসের কবরখানায় রাত কাটাত। এডভেঞ্চার ভালোবাসত বেলাল। সুনীল ওকে এক বাঙালিবাবুর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বহুকাল আগে। সেই বাবু যখন দেশের বাড়িতে যেতেন তখন বেলাল সেই বাড়ির ঠাকুরদের পুজো দিত। এতটাই ভালো ছিল বেলাল।

বেলাল খুব বই পড়তে ভালোবাসত। সুনীলও ওকে খুব পড়ুয়া বলত। ওর সঙ্গে শেষ দেখা হয় সুনীলের মৃত্যুর পর। দিল্লিতে কবিতা পড়তে এসেছিল ২০১৩ সালে। সেবার কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যায়। ওই শেষ দেখা। অসুস্থও হয়ে পড়েছিল সেবার। আজ শুনি বেলাল আর নেই। মন ভারাক্রান্ত হয় আছে।