একটি চিঠি

sandipan

 

৩/১১

বিকেল ৪টে

 

প্রিয় দেবেশ,

তোমার উপন্যাস আমার জীবনের অন্যতম সাইক্লোনের মধ্যেও পড়ে নিয়েছি।

তোমার ভাষা এতদিনে আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। আমি জানতাম ‘আমরা’ যে-ভাষায় লিখি সেটা উপরি-স্তরের ভাষা। হয়ত ইন-বিটুইন লাইনস তার সঙ্কেত থাকতে পারে—কিন্তু ভাষা-উৎস তার বস্তু-ধর্ম নিয়ে সেখানে নেই।

এই প্রথম লক্ষ্য করলাম, সেই যে অন্তর্গত উৎস-ভাষা—তা স্বয়ং তোমার রচনায় উপস্থিত হয়েছে। বিশেষত, পরিচ্ছেদ-৩ সর্বাঙ্গে তাকে ধরে আছে।

আমাদের ‘ভাষা’য় তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা যায় না। এ এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। উৎস-ভাষার এ-ভাবে ওপরের স্তরে উঠে আসা।

ভূমিকম্পে অগ্ন্যুৎপাতে এমনটা হয়। যখন পৃথিবীর যৎকিঞ্চিৎ মাটি-পাথুরে স্তরের পর রয়েছে যে হাজার-হাজার মাইল কঠিন, তরল ও কেন্দ্রীয় ধাতু-স্তর—সেখানে থেকে কিছু উঠে আসে। সিসমোলজিস্টের কাছে সে-সব অতি আদরের জিনিষ। আমার কাছে তেমনি তোমার এবারের রচনায় এই উৎস-ভাষার আবির্ভাব। বিশেষত, পরিচ্ছেদ-৩’এ। ইতি,

 

আজ বড় একান্তভাবে তোমারই গুণগ্রাহী।

সন্দীপন।

 

পুঃ ১. আমার এই ওপরের স্তরের ভাষাকে মাপ কোরো ভাই।

পুঃ ২. সাইক্লোন বলতে মেয়ের বিয়ে।

পুঃ ৩. কাল আসবে? ২টো-৩টে।

...................

একজন বন্দী বলতে কী, একজন মুক্তিকামী বলতে কী—তার পালাবার ইচ্ছেও অপারগতা বলতে কী (মানুষের ব্যবহার নয়)—এই বিমূর্ততা তো উৎস-ভাষা ছাড়া আর কিছুতে মূর্ত হয় না।

*

কোন লেখা নিয়ে কথা বলেছেন সন্দীপন তা স্পষ্ট নয়। তবে সন্দীপনের কন্যা তীর্ণার বিয়ে হয় ১৯৮৯ সালে। ওই বছর দেবেশ রায় লিখেছেন, ‘সময় অসময়ের বৃত্তান্ত’ উপন্যাসের একটি টুকরো—‘কলকাতার শব্দতত্ত্ব নিয়ে’, তাছাড়া দে’জ থেকে এবছরই বেরোয় পরিমার্জিত ‘মফস্বলি বৃত্তান্ত’ উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ।পুনর্মুদ্রণ