তিনি আমাদের হাসির দেবতা

noname
কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা মরতে পারেন না, আক্ষরিক অর্থেই পারেন না, নিজেরা কখনো মরেন না। প্রয়োজনে তারা মরে গিয়েও প্রমাণ করতে পারেন যে, তারা বেঁচে আছেন। প্রবলভাবে বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকাই তাদের কাজ। তাদের জীবন এত প্রখর। আলম তালুকদারের মৃত্যু সংবাদ শুনে প্রথমে এই কথাটিই মনে হয়েছে—আলম তালুকদার মরবেন কেন? বা আলম তালুকদার মরে নাকি?

যারা তাকে ছাপার অক্ষরে চেনেন-জানেন মাত্র, তাদের কাছে খটকা লাগতে পারে। তারা বলতেই পারেন আতিশয়োক্তি করছি। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। যারা তাকে সাক্ষাতে জানেন, তারা মানেন যে, আলম তালুকদার বাংলাদেশের লিভিং ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। এইটাই লিভিং যে তার প্রাণসত্তার কাছে ছাপার অক্ষর দিয়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সেখানে দরকার হতে পারে চোখের মতো দুটো ভিডিও ক্যামেরা, প্রফুল্ল হবার মতো হৃদয়। তিনি মরণশীল মানুষকে জীবিত করে তুলতে পারেন। হাসির তুবড়ি ছোটাতে পারেন ‘রাম গরুড়ের ছানা’র মুখে, যারা পণ করে আছে হাসবে না, হাসবে না।

আলম তালুকদার ছিলেন পানাসক্ত, এই পান মানে তাম্বুল, দিনমান তিনি তার রস আস্বাদন করতেন আর আকর্ণবিস্তৃত হাসি ঝুলিয়ে রাখতেন। তার দেখা ছিল সাধারণ চোখের দেখা নয়, তিনি তার মধ্যে ‘হিউমার অব ফ্যাক্ট’ ঠিকই খুঁজে বের করতেন। অনর্গল ছন্দে ছন্দে—অন্তানুপ্রাস যাকে বলে—কথা বলতে পারতেন। এজন্য তার মিল খুঁজতে হতো না, পানের রসের মতো সবসময় মিল হাজির থাকতো।

বাঙালির আড্ডায় ‘চুটকি’ বলে একটা ব্যাপার আছে, অ্যাডাল্ড জোকস যাকে বলে, তিনি তা উজাড় করে দিতে পারতেন ঘরোয়া শ্রোতার সামনে। হয়ত একটা বিষয় নিয়ে শুরু করেছেন, অন্যান্যরা বলতে শুরু করলেন, তারা একটা দুটো বলে কুপোকাত, কিন্তু আলম তালুকদার আলেকজান্ডারের মতো বীর এসব বলায়। তার ঘড়া উপুড় করলেও কোনো রস ফুরায় না। অফুরন্ত হাসি তার বাক্সে ভরা। তিনি হাসতেন এবং হাসাতেন। হাসতে হাসতে যাকে বলে পেটে খিল ধরা, চোখে পানি আনা, তা তিনি অনায়াসেই করতে পারতেন। তার সেন্স অব হিউমার এতই প্রখর যে, তাতে কোনো সেন্সর মানতেন না।

আমরা অনুজরা তাকে আড়ালে-আবডালে ‘মলম তালুকদার’ বলতাম। মানে তিনি আমাদের শুষ্ক হয়ে যাওয়া হৃদয়ে, হাসতে না পারা ব্যথায় নিমেষেই মলম দিয়ে শুশ্রূষা করে দিতেন। আমরা তার কাছে হাসতে শিখেছি। তিনি আমাদের হাসির দেবতা। তিনি মরবেন কেনো? কোন দুঃখে মরবেন?