সাক্ষাৎকার

নারীদের গোপন গভীর কথাগুলো ধরতে চেষ্টা করেছি : শাহীন চিশতী 

[ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক শাহীন চিশতীর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এই উপন্যাস লেখার ভাবনাবিন্দু থেকে শুরু করে বিষয়গত নানা প্রসঙ্গ ও লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়।
শাহীন চিশতি বিখ্যাত সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর বংশধর, লন্ডনে বসবাসরত একজন লেখক। তার ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ লিঙ্গ বৈষম্য, জাতিগত নিপীড়ন, যুদ্ধকালীন দুর্দশা ও নারী মুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লেখা।]


প্রশ্ন : কোন ভাবনা থেকে ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ লেখা শুরু করেছিলেন?
উত্তর : একটা স্বপ্ন থেকে। আমি এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি যেখানে আমার মেয়ে এবং ভবিষ্যত নাতনিরা সম্মানের সাথে বাঁচবে। যেখানে তাদের কোনো অন্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে না, শুধুমাত্র তাদের নারী পরিচয়ের কারণে ভয় করতে হবে না। সমাজ, সংস্কার কিংবা চিন্তা-ভাবনায় যদিও আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি; কিন্তু তারপরও আমি বলতে চাই, এ পথ এখনও শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে আমাদের নাতনিরা যাতে পুরুষের ভয়ে ভীত না থাকে, নিজেদের প্রতিভা দমিয়ে না রাখে, সেজন্য আমাদের আরও অনেকখানি পথ যেতে হবে।
আমি তরুণীদের অধিকার ও ক্ষমতায়ণের পথ দেখাতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি, তারা যাতে নিজেদের হারিয়ে না ফেলে। অসংখ্য নারী বর্তমানে মাথা উঁচু করে চলতে পারছে কারণ তাদের আগের প্রজন্মের সাহসী নারীরা সে পথ তৈরি করে গিয়েছেন বলে। সেই প্রজন্মের দাদি-নানিদের নির্মোহ আত্মত্যাগ আজ তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তবে দুঃখের কথা হচ্ছে, সেই দাদি-নানিদের অনেকেই পারিবারিক ও সামাজিক চাপে তাদের জীবনের গল্পগুলো না বলেই পৃথিবী থেকে বিদেয় নিয়েছেন। কেউ সাহস করে উঠতে পারেনি, কেউ হয়তো সে সুযোগই পাননি। আমি মনে করি এখন সময় এসেছে তাদের সেই ঘটনাগুলো বলার।

প্রশ্ন : নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে লেখার অনুপ্রেরণা কীভাবে এলো?
উত্তর : আমার জন্ম রাজস্থানের আজমীরে। প্রচলিত হিন্দু ও মুসলিম সমাজব্যবস্থায় নারীদের জীবন আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। গ্রামের অনেক পরিবারের সাথে আমার সখ্য ছিলো। নারীদের অনেক জটিলতা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে। এসব ঘটনা আমার ভেতরটাকে ওই বয়সেই নাড়িয়ে দিয়েছিলো। এরপর আমি অল্প-বয়সে ইংল্যান্ড চলে আসি। সেখানে স্বাধীনচেতা নারীদের দেখা পাই, যারা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য বদ্ধপরিকর, অধিকার আদায়ে সচেতন। দুই দেশের নারীদের প্রত্যক্ষ করে আমি বুঝতে পারি আসলে দু’দিকের নারীরাই বিভিন্ন সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই সমাজ আমাদের মা, বোন, কন্যা, স্ত্রীদের সাথে অন্যায় করে আসছে যুগের পর যুগ। এই ভাবনা থেকেই আমি একটি উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে আমি বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থায় মেয়েদের প্রতি অন্যায় এবং দমিয়ে রাখার কথাগুলো তুলে ধরবো।

প্রশ্ন : ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ নিয়ে আপনার সবচেয়ে বড় ভয় কোনটি?
উত্তর : আমার বইয়ে লেখা নারীদের প্রতি সুবিচার না করা। আরও বিস্তারিত বলতে যে সব নারীদের কথা লিখেছি, তাদের হতাশ করা। কারণ তারা অগাধ বিশ্বাস নিয়ে আমাকে তাদের জীবনের নির্যাতন ও কষ্টের কথাগুলো বলেছেন। আমার এ বই সমাজের নারীদের একটা প্রতিফলন মাত্র এবং এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে অনেক নারীকেই যেতে হয়েছে। আমি নারীদের গোপন এবং গভীর কথাগুলো ধরতে চেষ্টা করেছি। কোনো কোনো পাঠকের ক্ষেত্রে এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়তো অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই অস্বস্তির ভেতর দিয়ে অসংখ্য নারী সমাজে বাস করছে। সমাজের উন্নতি আনতে পুরানো ভুল থেকেই আসলে শিক্ষা নেয়া উচিত।

প্রশ্ন : বই প্রকাশের জন্য আপনি সমর্থন পেয়েছেন?
উত্তর : অবশ্যই। এই বই লঞ্চের পেছনে একটা চমৎকার টিম কাজ করে যাচ্ছে। লেখার সময় যেসব নারীর সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে; কাজটা আমি তাদেরই উৎসর্গ করেছি। বইয়ের ঘটনা কাল্পনিক হলেও পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য নারীর বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই এটা লেখা। তারাই আসল হিরো, আমি নই।
আমার পরিবারের প্রতিও আমি অনেক কৃতজ্ঞ। বিশেষত সেসব নারীর প্রতি, যারা আমার জীবনে অবদান রেখেছেন। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু দৃঢ় মানসিকতার নারীর মধ্যে বড় হয়েছি। আমি আজ যা, তা তাদেরই অবদান।

প্রশ্ন : এই উপন্যাস লেখার সময় আপনি কী কী শিখেছেন?
উত্তর : মেয়েরা কিভাবে শত নির্যাতন ও লাঞ্ছনা মুখ বুজে সহ্য করে, বিশেষ করে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং দারিদ্র্যের সময়; তা নিয়ে বিস্তর ধারণা হয়েছে। সত্যি বলতে গেলে, এই অভিজ্ঞতাগুলো আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এটা এমন একটা ব্যাপার যা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত অনুভব বা বিশ্বাস করা যায় না যতক্ষণ না বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করা হয়। কিছুক্ষেত্রে এ জাতীয় হয়রানিকে সৈন্য অথবা শত্রুপক্ষের সাথে গুলিয়ে ফেলি আমরা। মাঝে মাঝে দেখা যায় এই যৌন হয়রানির পেছনে এরা নয় বরঞ্চ দায়ী বাবা, ভাই এবং বন্ধুরা। যুদ্ধের মোড়কে এই ঘটনাগুলোকে আড়াল করা খুব সহজ। কিন্তু কিছু পুরুষ এমন অবস্থার সুযোগ নিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চায়।

প্রশ্ন : এসব নিয়ে কাজ করার সময় কিছু নিয়ে অবাক হয়েছেন কি?
উত্তর : ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর ইতিহাসের প্রভাব। আমার উপন্যাসে লেখা দাদি-নানিদের কষ্টের অভিজ্ঞতা সরাসরি তাদের নাতনি এবং পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। এই মানসিক যন্ত্রণার অবসান ঘটতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, কিন্তু এই আঘাত তাদের আরও দৃঢ় করে গড়ে তোলে, যা তাদের নাতনিদের সাথে বন্ধনকেও মজবুত করে। এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও নাতনিরা তাদের দাদি-নানির সাথে একটা যোগসূত্র অনুভব করে, গর্ব করে। কারণ তারা ভবিষ্যত প্রজন্ম কে যে অনুপ্রেরণা দিয়ে যান, তা অটুট থাকে চিরকাল।

প্রশ্ন : বইয়ের নাম ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ হবার কারণ কী?
উত্তর : এই নাম আমাকে অনেকখানি পথ হেঁটে আসা দাদি-নানিদের, এবং তাদের নাতনিদের জন্য কিছু একটা করার অদম্য ইচ্ছাকে মনে করিয়ে দেয়। এটা অনেকটা তাদের কাছে একটা আশার বাণী পৌঁছে দেয়ার মতো। তারা একটা পরিবর্তন আনতে চাইতো। তাদের মনে একটা বদ্ধপরিকর ধারণা ছিলো যে, তারা এটা করতে পারবেন।

প্রশ্ন : বইয়ের চরিত্রগুলো কি বাস্তব? যদি বাস্তব হয়ে থাকে তবে আপনি তাদের কথা কেন লিখেছেন, এবং তাদের অভিজ্ঞতাগুলোও কি বাস্তব?
উত্তর : হ্যাঁ, অবশ্যই। বইয়ের প্রতিটি দাদি-নানি চরিত্র আসলে অনেকগুলো চরিত্রের সংমিশ্রণ। যারা প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনা এমন হাজারো নির্যাতিতা নারীর প্রতিধ্বনি। চরিত্রগুলো আমার পরিচিত আসল কিছু মানুষের উপর ভিত্তি করে বানানো। তাদের ঘটনা আমাকে মুগ্ধ করে, নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। সেসব ঘটনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এ উপন্যাস। এ চরিত্রগুলোকে আমি গত ১৩০ বছরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা চিত্রায়ণ করতে ব্যবহার করেছি। যেমন ৪৩ এর বাংলার দুর্ভিক্ষ, হলোকাস্ট এবং ১৯৫৮ সালের নটিং জাতির দাঙ্গা। এসবকিছুই নারীর ক্ষমতায়ণের জন্য ব্যবহার করা এবং ওই সময়ের নারীদের দুর্দশাগুলো তুলে ধরা।

প্রশ্ন : লেখার জন্য কেন এই ঘটনাগুলো বেছে নিলেন?
উত্তর : ছোটবেলা থেকেই আমি বাংলার ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে পড়ে আসছি, যা নিয়ে খুব বেশি একটা লেখালেখি হয়নি; অন্তত আমার বইয়ে আমি যতটুকু তুলে ধরেছি, ততটুকু না। ইন্ডিয়াতে থাকার সময় হলোকাস্ট নিয়েও খুব অল্প বয়েসেই একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিলো। আমার বয়স যখন ৬, তখন এডলফ হিটলারের উপর একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম। আর এই বিষয়ে পড়াশোনাও করেছিলাম বেশ কয়েকবার। সৌভাগ্যবশত আমার খুব ভালো কিছু ইহুদি বন্ধু ছিলো; যাদের সাথে আমাদের সামাজিকতার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলাম। আর লন্ডনে আসার পর স্কুলের যাওয়ার পথে নটিং হিল পড়তো। তাই এই জায়গাটা সবসময়ই আমার হৃদয়ের কাছাকাছি ছিলো। এবং ঠিক এখানেই আমি প্রথমবারের মতো বর্ণবৈষম্য প্রত্যক্ষ করেছিলাম।
‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’-এর প্রচ্ছদপ্রশ্ন :
আপনার পাঠক মূলত কারা?
উত্তর : যাদের মেয়ে আছে, নাতনি আছে কিংবা জীবনে কোনো নারী আছে; যারা চায় এই নারীরা তাদের স্বপ্ন নিয়ে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যেতে পারে তাদের জন্য।
আমার দু’জন মেয়ে আছে। আমি তাদের বোঝাতে চাই যে লিঙ্গ, জাতি, সমাজ, বর্ণ, ধর্ম- এসবের উর্ধ্বে তারা একই রকম গুরুত্ব বহন করে। আমরা সবাই মানুষ। এবং মানুষ মানুষের জন্য।

প্রশ্ন : লেখা শেষের পর আপনি চরিত্রগুলোর কেমন পরিণতি আশা করেন? 
উত্তর : মায়া, রেবেকা, তানিয়া- আমি ভাবতে ভালোবাসি যে আমার বইয়ের এই তিন চরিত্র তাদের দাদি নানিদের মতোই সবসময় নিজেদের ভেতর যোগাযোগ রেখেছে, ভালো বন্ধু হয়েছে। তাদের একীভূত শক্তি তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে, যে সিদ্ধান্ত সমাজ তাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিবে না। আমি চাইবো তারা আরও এগিয়ে যাক, ও অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।

প্রশ্ন : বইয়ের প্রিয় চরিত্র কোনটি?
উত্তর : ইনগ্রিদ আমার প্রিয় চরিত্র। যখন কেউ হেলগার পাশে দাঁড়ায়নি, তখন সে যে সাহস আর শক্তির নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে, তা অনুপ্রেরণাদায়ক। সমাজের চোখ রাঙানি, আইনের বাঁধা উপেক্ষা করে সে যা করেছে তা চিন্তা করাও অকল্পনীয়। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এর বিনিময়ে সে কিছু আশাও করেনি। শুধুমাত্র বিবেকের তাড়নায়, খাঁটি অন্তর থেকেই সে কাজটা করেছে। সবাই নৈতিক সাহসিকতার কথা বলে। কিন্তু এ নৈতিকতা দেখানো সবসময় দেখানো যায় না। অনেক বাঁধা থাকে। সবথেকে সহজ হচ্ছে কিছু না করে থাকা। কিন্তু ইনগ্রিদ তা করেনি। সবাই যদি ওর মতো ভাবতে পারতো, সাহস করতে পারতো তাহলে আমরা আরও সহনশীল একটা সমাজে বাস করতে পারতাম।

প্রশ্ন : ভবিষ্যতে আরও বই লেখার পরিকল্পনা আছে?
উত্তর : হ্যাঁ। আমার আরেকটা বই লেখার প্ল্যান আছে। সঠিক সময় এলেই বিস্তারিত জানানো হবে।

প্রশ্ন : এই বইয়ের কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
উত্তর : খুবই ইতিবাচক। আমার মেয়েরা এই বই খুবই পছন্দ করেছে। এবং ওরা আমাকে নিয়ে গর্বিত। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব- মোটামুটি সবার কাছ থেকে ভালো প্রশংসা পেয়েছি।

প্রশ্ন : এই উপন্যাসটি লিখতে কতদিন সময় লেগেছে?
উত্তর : দেড় বছর। যেহেতু আমি ফুল টাইম কাজ করি, তাই শুধু ছুটির দিনগুলোতেই লেখার সময় পেতাম। একটা পরিবারের খেয়াল রাখার পাশাপাশি বই লেখা খুব সহজ কাজ না। আমার এই পরিশ্রম তখনই সার্থক হবে যখন এই বই কারও জীবনে একটু হলেও পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

প্রশ্ন : যারা লিখতে চায় তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে?
উত্তর : লেখা শুরু করে দিতে হবে। মাথার শব্দগুলো কাগজের উপর নিয়ে আসা খুব কঠিন। নিজের লেখা বারবার পড়তে হবে, আইডিয়া নিয়ে বারবার কাজ করতে হবে। তাহলেই কাজে সফলতা আসবে। হৃদয় থেকে লিখতে পারলেই লেখায় ন্যাচারাল আবহ আসে। লেখায় কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা থাকলে বর্ণনাগুলো যেন সঠিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রশ্ন : ‘দ্য গ্র্যান্ডডটার প্রজেক্ট’ কীভাবে কেনা যাবে?
উত্তর : প্রায় সব দেশ থেকেই অ্যামাজনে পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য অনলাইন বুকশপেও আছে। চাইলে সরাসারি প্রকাশনীর মেইল-এ (sales@nimblebooks.com) অর্ডার করা যাবে।