রিস্টার্ট

করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য83

বাংলাদেশে বাস কইরা আমেরিকান/ব্রিটিশ কোম্পানিতে চাকরি করার মুশকিলটা কী জানো মুবিন? সবচেয়ে বড় মুশকিল হইল ও বেটারা ওদের দেশের মতো কইরা চিন্তাভাবনা করে,নিয়ম বানায়,সতর্কতা জারি করে...মনে আছে?কয়বছর আগে একবার অ্যাসিড বৃষ্টি হবার অগ্রিম আবহাওয়া বার্তা জানাইয়া অফিসে কী হুলস্থূল ফেলছিল...বন্ধুদের কাছে সেবার্তা শুনাইয়া আমি তো রীতিমতো হাসির পাত্র হইছিলাম মিয়া...ধুর! বাঙালি হইল বীরের জাতি... এইসব করোনা ফরোনা এদের অসচেতনতা,বিটলাবুদ্ধি আর ঘাউড়ামি দেইখা বাপ বাপ কইরা পালাইব...খামোখাই তুমি আমি ঘরবন্দি হইয়া আছি...আরেহ যত যাই বলো, বাসা থেকে অফিস করা একটা আনকম্ফোর্টেবল ব্যাপার।

...সেফটি ফার্স্ট রোহান ভাই...আপনার মতো মানুষের এভাবে বাসায় থাকা ডিফিকাল্ট বুঝি কিন্তু নো ওয়ে...অন্যবারের সতর্কতার কথা বাদ দেন এবার কিন্তু পাত্তা না দিয়ে উপায় নাই...কটা দিন যেতে দেন করোনাকে পাকোড়া বানিয়ে ট্রল করা বাঙালি দেখবেন ইঁদুরের গর্তে লুকিয়েও পার পাবেনা!

ওহ ভালো কথা...শুনলাম করোনা পজিটিভ হলে এলকোহলের গার্গল খুব কাজে দেয়...আপদকালীন সময়ের জন্য এটলিস্ট দু-চার বোতল মজুদ রাইখেন...সব শেষ করে ফেইলেন না...

...মস্করা কইরো না...জানোই তো বাসায় ওইসব খাওয়ার পরিবেশ নাই...মুড আসেনা...তোমার যা লাগে নিয়া যাও...

...তাইলে আর কী?...আপনি ভাবীর বানানো আদা গরম জল খান...রান্নাঘরে হেলপারি করেন...এই সুযোগে বরফ গলুক...হা...হা...

বুয়েটের দুই ইয়ার জুনিয়র মুবিন,সেভরনে কলিগ হিসেবে এসে গত সাত বছরে রোহানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছে। গৃহে অন্তরীণ এই করোনা কালে মাঝেমধ্যেই দুজন হালকা কথাবার্তায় নিজেদের চাঙ্গা করে নেয়। কিন্তু মুবিন কি আজ একটু খোঁচা দিল?মুনার সঙ্গে তার বনিবনার ফাঁরাক নিয়ে?

সে যাই হোক... একথাও তো সত্যি যে, গত কয়েকদিন একটানা এভাবে বাসায় থাকায় মুনাকে সে নতুন রূপে আবিষ্কার করে চলেছে। সকালে চায়ের কাপটা হাতে দেয়ার সময় ওর ভেজা চুল থেকে দারুণ একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসেছিল নাকে...কী শ্যাম্পু দেয় ও?এইযে সারাদিন ছুটোছুটি করে একাহাতে সব সামলাচ্ছে...বাবা-মায়ের খেয়াল রাখছে...তাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চা-কফি জোগান দিয়ে যাচ্ছে...নাহ্,দম আছে মেয়েটার!

আজই তো...এই দুর্যোগে খাবার সাশ্রয়ের কথা বলে কীসব আইটেম দিয়ে লাঞ্চ সাজিয়েছিল!

পটলের বিচি ভর্তা,মলা মাছের মাথা বাটা,লাউয়ের খোসা ভাজি...আগে হলে এইসব টিপিক্যাল মধ্যবিত্তপনা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যেত কিন্তু ইদানিং এইসব কাণ্ডকারখানা মন্দ লাগছে না।বরং ঘরকন্নায় আলুথালু মুনাকে দেখতে কেমন আকর্ষণীয় লাগছে রোহানের,এলেবেলে খাবারের টেস্টও নেহায়েত খারাপ না।অথচ ছোটখাটো কিছু বিষয়ে একমত হতে না পেরে,নিজের মতকে চাপিয়ে দিতে না পেরে গত তিন বছরের বিবাহিত জীবনেও ওদের মধ্যে হৃদ্যতা গড়ে ওঠেনি।হৃদয়ের ফাঁকফোকরগুলো মেরামতের সুন্দরতম উপায় কী হতে পারে এটা নিয়ে বোধহয় ভেবে দেখার সময় এসেছে।আজ রাতে একটা মুভি দেখলে কেমন হয়,মুনার পছন্দের কোনো মুভি।

টুং করে ভাইবারে জেনির টেক্সট এসে ভাবনায় ছেদ ঘটায়...

...আর ইউ ওকে হানি?কোনো খোঁজ নিচ্ছ না...ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছি...তোমাকে ভীষণ মিস করছি...

...হুম...অফিসের এত কাজ বুঝলা!একদম সময় পাইনা...এনিওয়ে, তুমি কি মলা মাছের মাথা ভর্তার রেসিপি জানো বেবি?

...হোয়াট রাবিশ!এটা কোনো খাবার জিনিস?ঘরে থেকে থেকে তোমার মাথাটাই গেছে!

....ঠিক বলেছ...মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে...রিস্টার্ট দিতে হবে...