রক্তকরবী : নন্দিনীর দ্বিতীয় পাঠ

প্রখর চৈত্রদিনে ভোরবেলাতেও ক্লান্তি লাগে। দিকচিহ্নহীন লাগে এই জীবন। ভাবি ক্লান্তি কী বয়সের না মনের? না কেবলই এই প্রখর রৌদ্রবেলার! জীবনের আলোর ভেতরেও অন্ধকারের কালোদের নাচন দেখি। আমার ভেতরের আমিকে খুঁজি। আমার ভেতরে আমি, আমির পাশে আমি, মনখারাপের আমি, আনন্দের আতিশয্যে আমি। মনের ভেতরের যাবতীয় দ্বিধাবিভক্তি নিয়েই ভোরবেলায় ছাদের বাগানে যাই। আমারি হাতে অনেক যত্নে তৈরি এই বাগান। বিভিন্ন বর্ণের জবা, টগর, গোলাপ, বেলী, গন্ধরাজ, অলকানন্দা, কামিনীতে ভরে আছে বাগান। একদিন খুব ভোরে উঠেছিলাম। সূর্য মাত্রই উঠি উঠি করছে। বাগানে যেয়ে টের পেলাম স্বর্গীয় পরিবেশ। নানা রঙের ফুল, পাখি আর প্রজাপতির মিলনমেলা। বাতাস বইছিল স্নিগ্ধতায়। আমি ওদের বিচিত্র আনন্দের মধ্যে চুপিচুপি এক মুহূর্ত কাল দাঁড়ালাম। বাতাসতাড়িত রঙ্গনগাছের মাথায় এক নীল পাখি দেখে আমার রক্তকরবীর নীল পাখির পালক আর রঞ্জনের কথা মনে পড়ল। আমি যেন মুহূর্তেই নন্দিনীকে দেখতে পেলাম নিজের ভেতর। আর দাঁড়াতে সাহস পেলাম না। যদি আমার উপস্থিথিতে নষ্ট হয় এই ফুল-পাখি আর বাতাসের সুতীব্র রসায়ন! ছাদঘরে বসে রইলাম নিশ্চুপ হয়ে। কী করব! এই অসাধারণ সৌন্দর্যকে তো মুঠিভরে নিয়ে নিতে পারব না, তাই চুপ করে এককোণে ঘোরের মধ্যে বসেছিলাম। সূর্য উঠছে, তার সাথে সাথে মহাজাগতিক কোনো এক আকস্মিক টানে ফুটতে থাকল আধফোটা ফুলগুলো। আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। মনের গভীর গোপনকেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ে পুলক। গোপন অভিসারে দেখি সময়ের আবর্তন যা ভিতরে ভিতরে ঘটিয়ে দেয় এক আমূল বিস্ফোরণ। একে আমি কোন্ ভাষায় তুলে আনব? পারব কী! জানি পারব না। তাই নীরব হয়ে চুপিসারে দেখি একমনে। কেমন করে ঘটে রূপান্তর, বাইরের রূপের সাথে কোথাও হয়তো মিলে যেতে থাকে আমার নিজস্ব অন্তরের রূপ। চোখের দেখা আর মনের দেখা মিলিয়ে যেন একেবারেই অন্য কিছু।
‘রক্তকরবীর, নন্দিনীর কথা ভাবতে ভাবতে সময় গড়িয়ে যায়। নন্দিনীর অন্ধ আবেগের মাঝে আমিও যেন লুটিয়ে পড়ি। ওইরকম এক অন্ধ আবেগের ঘোরে নন্দিনী যখন বলে, ‘জলের ভিতরকার হাল যেমন আকাশের উপরকার পালকে ভালোবাসে―পালে লাগে বাতাসের গান, আর হালে জাগে ঢেউয়ের নাচ।’ তেমন করেই রঞ্জনকে ভালোবাসে নন্দিনী। আমি তার ওই কথার সুর নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নেই। নন্দিনীর ভাষায় রঞ্জনের বর্ণনা আমার নিজস্ব মনোজগতের আলোছায়ায় এক অন্যমাত্রা এনে দেয়। রঞ্জন দেখতে কেমন! অন্ধকারের রাজার মতো আমিও ভাবি। নন্দিনী বলতে থাকে ‘দুই হাতে দুই দাঁড় ধরে সে আমাকে তুফানের নদী পার করে দেয়; বুনো ঘোড়ার কেশর ধরে আমাকে বনের ভিতর দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যায়; লাফ―দেওয়া বাঘের দুই ভুরুর মাঝখানে তির মেরে সে আমার ভয়কে উড়িয়ে দিয়ে হা হা করে হাসে। আমাদের নাগাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্রোতটাকে যেমন সে তোলপাড় করে, আমাকে নিয়ে তেমনি সে তোলপাড় করতে থাকে। প্রাণ নিয়ে সর্বস্ব পণ করে সে হার-জিতের খেলা খেলে। সেই খেলাতেই আমাকে জিতে নিয়েছে।’ এইসব কথার ভিতরে তৈরি হওয়া ছায়াকথন কেমন করে যেন অনুভবের মধ্যে তৈরি করে দিয়ে যায় ফ্যান্টাসির এক তুমুল বুদবুদ। আমি সেই অনুভবের আলোয় আমার প্রেমকে খুঁজি। যে শুধু নিঃশব্দচরণেই আসেনি। টুকরো সময়কে তোলপাড় করে বিচিত্র ছন্দে তার আগমন আর তীব্র বেদনার সাথে তার ফিরে যাওয়াকেও টের পাই। নন্দিনীর প্রেমে যে সুর আছে, তা যেন অনিবার্য, একেবারেই অন্যরকম। সে তার নিজস্ব অন্তর্গত প্রেম, আলো, রক্তকরবীর ফুল আর কুঁন্দ ফুলের মালা দিয়ে যে উপচার সাজিয়ে আনে তার সাথে যোগ হয়ে যায় তার সাজ পোশাক হাসি আনন্দের সহজ প্রেমময় উদ্ভাসন। নন্দিনীর প্রেমের সহজ প্রকাশ ও স্বাভাবিকতা অন্ধকারের রাজাকে তার আত্মপরিচয়ের আর্তি ও অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি করে তোলে। জালের অন্তরালে সে টের পায় আবহমান কালের প্রেমহীনতার যন্ত্রণা, নিঃসঙ্গ মরুভূমিতে কাঁটাগাছ হয়ে একলা থাকার যন্ত্রণা, নিজেকে সে দেখতে পায় ডাল পাতা হীন নেড়া পলাশগাছের মতো, যার সর্বাঙ্গে আগুন। তাই সে অন্তরাল থেকে নন্দিনীকে বলে, ‘আমি প্রকাণ্ড মরুভূমি-তোমার মতো একটি ছোট্ট ঘাসের দিকে হাত বাড়িয়ে বলছি―আমি তপ্ত, আমি রিক্ত, আমি ক্লান্ত। তৃষ্ণার দাহে এই মনটা কত উর্বরা ভূমিকে লেহন করে নিয়েছে, তাতে মরুর পরিসরই বাড়ছে, ওই একটুখানি দুর্বল ঘাসের মধ্যে যে প্রাণ আছে তাকে আপন করতে পারছে না।’
নন্দিনী বুঝতে পারে না এই মানুষটির অসম্পূর্ণতা কোথায়? সে তার শক্তি দেখে আর্শ্চয হয়। রাজার চারদিকের জালে ঘেরা পৃথিবী তাকে বিস্মিত করে। তবু সে সমস্ত কুয়াশা ভেদ করে সহজ মন নিয়ে রাজার কাছে যেতে চায়। কুঁন্দফুলের মালা গেঁথে রাজাকে পরাতে চায়। অবাক হয়ে যক্ষপুরির রাজাকে প্রশ্ন করে, ‘সোনার পিন্ড কি তোমার ও হাতের আর্শ্চয ছন্দে সাড়া দেয়, যেমন সাড়া দিতে পারে ধানের খেত! আচ্ছা রাজা, বলো তো পৃথিবীর এই মরা ধন দিন-রাত নাড়াচাড়া করতে তোমার ভয় হয় না?’ নন্দিনী বড়ই সাধারণ, কিন্তু তার রয়েছে সমগ্রতার বোধ। তার অন্তর্গত সাবলীল প্রেম তাকে ছোট্ট রক্তকরবীর ফুল থেকে প্রকৃতির দিকে তাড়িত করে আর সেখানে বিশ্বভ্রমণের এক সমগ্রতার বোধ থেকে সে রাজার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। তার এই অন্তর্গত প্রেম বোধ থেকে সে যক্ষপুরির রাজার প্রতি ভয়কেও অতিক্রম করে। রাজাও বিস্মিত হয়, নন্দিনীর সাহস দেখে। কিন্তু নন্দিনীর রক্তকরবীর ফুলের সাথে রঞ্জনের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের গভীরতা তাকে ক্রোধান্বিত করে। তাই সে আক্ষেপ নিয়ে বলে, ‘আমি জানি রঞ্জনের সঙ্গে আমার তফাতটা কী। আমার মধ্যে কেবল জোরই আছে, রঞ্জনের মধ্যে আছে জাদু। পৃথিবীর নীচের তলায় পিণ্ড পিণ্ড পাথর, লোহা, সোনা। সেইখানে রয়েছে জোরের মূর্তি। উপরের তলায় একটুখানি কাঁচা মাটিতে ঘাস উঠেছে, ফুল ফুটেছে―সেইখানে রয়েছে জাদুর খেলা। দুর্গমের থেকে হীরে আনি, মানিক আনি, সহজের থেকে ও প্রাণের জাদুটুকু কেড়ে আনতে পারিনে।’ নন্দিনী তার উত্তরে বলে, ‘তোমার এত আছে, তবু কেবলই অমন লোভীর মতো কথা বল কেন?’ নন্দিনী রাজার সাথে সহজ ভঙ্গিতে কথা বলে ঠিকই কিন্তু অন্ধকারের অন্তরালে সকল রহস্যময়তায় ঘেরা রাজাকে নিয়ে তার সংশয় থেকেই যায়। রঞ্জন ও বিশুকে নিয়ে সে তীব্র উৎকণ্ঠায় থাকে। আর তাই সে চায় রাজার মনের রূপান্তর। পৌষের ফসল কাটার আনন্দের সাথে নিজের জীবন ছন্দকে যেমন মিলিয়ে নেয়, রাজাকেও সেই আনন্দের আলোতে মিলিয়ে নিতে চায়। আলোর বুকে এসে কেটে যাক রাজার অন্ধকার। অভিশপ্ত রাজা তা বোঝে ঠিকই, কিন্তু তার অপারগতার পক্ষে সে বলে, ‘সহজ কাজটাই আমার কাছে শক্ত। সরোবর কি ফেনার―নূপুর পরা ঝরনার মতো নাচতে পারে? আমার যা আছে সব বোঝা হয়ে আছে। সোনাকে জমিয়ে তুললে তো পরশমণি হয় না। হায় রে, আর সব বাঁধা পড়ে, কেবল আনন্দ বাঁধা পড়ে না।’
নন্দিনীর সহজ সুন্দর ছন্দ রাজাকে প্রলোভিত করে। তাই সে একবার নন্দিনীকে বলে, ‘জানালার বাইরে এই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, তোমার হাতখানি একবার এর ওপর রাখো।’ নন্দিনী আঁতকে উঠে বলে, ‘না, না, তোমার সবখানা বাদ দিয়ে হঠাৎ একখানা হাত বেরিয়ে এলে আমার ভয় করে।’
রক্তকরবি পড়তে পড়তে আমি অনিবার্যভাবে টের পেতে থাকি যক্ষপুরির প্রতিকূল অবস্থায়ও নন্দিনীর প্রেম ও মানবতাকে। প্রাণের সহজ ছন্দ আর সম্বন্ধ নিয়ে সে ভয়ানক রাজাকেও আপন করে নিতে চায়। তাকে বোঝাতে চায় প্রকৃতির খোলা নিরাভরণ আকাশতলের উদারতায় আর জীবনের সহজ কর্মের মধ্যেই আছে যাবতীয় মুক্তি ও আনন্দ। প্রকৃতি, মানুষ, কর্ম একই সরলরেখায় বাঁধা। চিন্তায় ও চেতনায় এই জীবনবোধই দিতে পারে মানবতার জয়।
আকাশের নীল রঙের দিকে তাকিয়ে আমি রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটকের কথা ভাবি। নীল রঙটিকে বড় আপন আর সুদূরের মনে হয়। অথচ, আকাশের এই নীল রঙের বিশ্লেষণে যে রয়েছে ধুলো, ধোঁয়া, জলকণা―বেমালুম ভুলে যাই। শুধু নীল রঙটুকু রেখে আর সব ভুলে যেতে চাই। আমার দৃষ্টি আর অনুভবের গভীরে নন্দিনীর প্রেমের কথাই ভাবি। এই নাটকটি যতবার পড়ি, আমি একে আবিষ্কার করতে পারি নানাদিক থেকে। প্রতিটি সংলাপই মনের ভিতর তৈরি করে দেয় গভীর আলোড়ন। তৈরি করে স্বপ্ন আর মহত্বের প্ল্যাটফরম। কিন্তু জীবন, সমাজ, পৃথিবী আমাদেরকে ক্রমাগত দিতে থাকে বিপরীত অভিজ্ঞতা। অন্ধকারের রাজার সাথে নন্দিনীর লড়াই আমাকে ব্যাকুলভাবে বেঁচে থাকার সহজ শান্ত ভাবটির দিকে তাড়িত করে। নন্দিনীর চারদিক থেকে যে মাটির গান ভেসে আসে, মাটির ওপর দাঁড়িয়ে, মাটিকে ভালোবেসে সে যে স্বপ্নের আভাস বোনে, সেখানে প্রকৃতির মুক্ত আকাশের নীচে দুহাত―দুদিকে ছড়িয়ে নিশ্বাস প্রশ্বাস নেবার জায়গা পাওয়া যায়। চারপাশে যক্ষপুরির মতোই যখন ইট, কাঠ, সিমেন্টের আবরণ, যখন চারদিকেই অত্যাচার আর অবিচারে ভেঙে পড়ে সময়, তখন নন্দিনীর প্রেমই পারে অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে।
রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটকটিকে আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটেও দারুণভাবে বিবেচনায় আনতে পারি। সারা পৃথিবীজুড়ে ভালোবাসার ধ্বংসস্তূপ। তার মধ্যেও আমরা কেমন নির্বিকারভাবে বেঁচে আছি। কোথাও কোনো স্বপ্নের আভাস নেই, অদৃশ্য দড়ি দিয়ে আমরা যেন সকলেই যক্ষপুরিতে বাঁধা। এই যক্ষপুরি হচ্ছে পুঁজিবাদের যক্ষপুরি, যেখানে ঘন কাজের বেঘোরে আমরা হারাচ্ছি সন্ধ্যাতারাটিকে একনজর দেখার সময়। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা হাঁপিয়ে মরছি, সব ভালো কিছুকে টুকরো টুকরো করে মরা ধনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আমাদের মরা প্রাণে বেঁচে থাকা এক অর্থহীনতায় দাঁড়িয়েছে, অনবরত, অবিরাম আমাদের মগ্ন চৈতন্যে মিশে যাচ্ছে হতাশার কালো মেঘ। প্রেম, প্রকৃতি, সভ্যতার পরম্পরা আমরা হারিয়েই ফেলেছি। এরকম সময়ে রবি ঠাকুরের রক্তকরবীর নন্দিনী আমাদের অস্তিত্বের প্রকৃত উপলব্ধিকে জাগিয়ে দেয়, চিনিয়ে দেবার চেষ্টা করে সমাজ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক।
হাজার হাজার চলমান মানুষের ভিড়ে আজকের সকল মানুষই একা। একাকী, প্রবল নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত। রক্তকরবীর ভয়ংকর প্রতাপশালী রাজার মতোই। পৃথিবীকে হাতের মুঠিতে ভরার চেষ্টায় মানুষ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। নন্দিনীর ইচ্ছে করে সমস্ত আলো এনে অন্ধকারের ওপর ঢেলে দেয়। তাই নাটকের অধ্যাপক চরিত্রটি যখন নন্দিনীকে বলে, ‘সকালে ফুলের বনে যে আলো আসে তাতে বিস্ময় নেই, কিন্তু পাকা দেয়ালের ফাটল দিয়ে যে আলো আসে সে আর এক কথা। যক্ষপুরে তুমি সেই আচমকা আলো।’
‘রক্তকরবী’ নাটকের আরেকটি প্রধান চরিত্র বিশু। যার জীবনের মধ্যে নন্দিনীর প্রতি তার গভীর প্রেম সকল তীব্রতা নিয়ে গান হয়ে ওঠে। সত্য বলার অপরাধে যক্ষপুরির রাজার প্রহরীরা যখন তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে, তখন নন্দিনী ক্ষিপ্ত হয়ে জিগ্যেস করে, ‘ওরা তোমাকে পশুর মতো রাস্তা দিয়ে বেঁধে নিয়ে চলছে, ওদের নিজেরই লজ্জা করছে না?’ প্র্রশ্নের উত্তরে বিশু বলে ওঠে, ‘ভিতরে মস্ত একটা পশু রয়েছে যে-মানুষের অপমানে ওদের মাথা হেঁট হয় না, ভিতরকার জানোয়ারটার লেজ ফুলতে থাকে, দুলতে থাকে।’ রক্তকরবীর সংলাপগুলোতে শব্দের জাদু তীব্রভাবে মানসিক প্রতিক্রিয়া ঘটায়। খুব সহজ ভাষায় ও ছন্দে উচ্চারিত হয় নির্মম কথাগুলো। তার ভিতরে স্নেহময়, প্রাণময় কথাগুলোও আছে, যা তৈরি করে দেয় জীবনের অবিরাম স্রোতের মাঝে বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা। মানব-মানবীর স্বতঃস্ফূর্ত আত্মিক প্রতিষ্ঠার মাঝখানে নির্মম সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপট আমাদের আজকের আক্রান্ত সমাজকে তুলে ধরে। অনিবার্যভাবেই আমাদের জীবন আক্রান্ত হয় যাবতীয় প্রেমহীনতা ও অন্ধকারের ধারাবাহিকতায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্দিশালা ঠিকই ভাঙে যদিও প্রেমের সংকেত বহনকারী রক্তকরবীর কঙ্কণ হাত থেকে খসে পড়ে ধুলায় লুটায়। ‘রক্তকরবী’ নাটকটিকে সমকালীন গভীরতায় নানাভাবে অনুভব করতে করতে সেই সময়ের সাথে আজকের সময়কে প্রত্যক্ষ করি। ক্রমবর্ধমান সংকট ও অস্থিরতার মধ্যে মানুষের কান্না ও মিতস্বর ‘রক্তকরবী’ নাটকের নন্দিনীর অস্তিত্বকেই খোঁজে অবিরত।