অনাবাসিক তকমা ঘুচছে জবির, উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছাত্রী হল

হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কয়েকদফা আন্দোলন, নির্মাণ কাজে ধীরগতি, ৫ দফায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির পর দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বহু আকাঙ্খিত প্রথম ছাত্রীহল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল।’ এর মধ্য দিয়ে অনাবাসিক তকমা ঘুচছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন হচ্ছে ছাত্রী হলটি। উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। 

FB_IMG_1603002430282

২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের ওপর। ১১১টি কক্ষ বিশিষ্ট হলটিতে রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যান্টিন, ডাইনিং। এছাড়া প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট ও আটটি গোসলখানা রয়েছে। 

১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ১২টি হল বেদখল হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর ২০০৯, ২০১১, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে  হল উদ্ধার ও নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নামে জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। হলের দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। ‘হল চাই, হল চাই’ স্লোগানে কম্পিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেসময় ২৯ দিন বন্ধ ছিল জবি ক্যাম্পাস। আন্দোলনে আহত হয় অনেক শিক্ষার্থী। এরপর নামমাত্র কমিটির মিথ্যে আশ্বাসে থেমে যায় এই আন্দোলন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আন্দোলন শুরু হলে, ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে

২০১১ সালে শুরু হয় ছাত্রী হল প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, ৩/১, লিয়াকত এভিনিউয়ের ২৩ কাঠা জায়গাটির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ছাত্রী হলের ব্যানার টাঙিয়ে জায়গাটি দখলে নেন। পরবর্তীতে  ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জায়গাটিতে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ তলা ফাউন্ডেশনের দুটি টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। 

দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে।

প্রায় ১০ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনই হলে উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস খুললে হলে ওঠার সুযোগ পাবেন তারা। হলের প্রোভস্ট অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘হল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে অনাবাসিক তকমা ছিলো এতদিন সেই তকমামুক্ত হতে যাচ্ছে। এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঐতিহাসিক ও আনন্দের।’

হলের আসন বন্ঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতিমালার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চাই না। খুব দ্রুতই আমরা এটা চূড়ান্ত করে, আপনাদের জানাতে পারাবো।’