প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকে শুরু হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করেছে ৫০তম বছরে। নানা রকম আয়োজনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) উদযাপিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস।

জাঁকজমক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারনে সেভাবে করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নিবন্ধক রহিমা কানিজ। তাই পরিস্থিতির আলোকে অনলাইনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে নয়টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে ৫০তম  বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা। উদ্বোধনের সময় উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। পরে ১০টায় শহীদ মিনারের পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রাক্তন উপাচার্য ও প্রাক্তন শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাধীনতার সমবয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৭১ হলেও সম্পূর্ণরূপে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। প্রতিষ্ঠাকালীন এর নাম ছিল জাহাঙ্গীরনর ‘মুসলিম’ বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ রাখা হয়।

১৫০ জন শিক্ষার্থী ও চারটি বিভাগ নিয়ে পথচলা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। চারটি বিভাগ ছিল অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটিতে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।

দেশের একমাত্র ‘আবাসিক’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতি রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। সকল শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা দিতে রয়েছে ১৬টি হল। এর মধ্যে ছেলেদের জন্য আটটি এবং মেয়েদের জন্যও রয়েছে আটটি হল। এছাড়া একহাজার শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এরকম আরও পাঁচটি হল নির্মাণাধীন রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’, ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘অমর একুশ’ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নামে দৃষ্টিনন্দন ‘মুক্তমঞ্চ’ এই ক্যাম্পাসে ইতিহাস ঐতিহ্যের জানান দেয়।

ইতিহাস ঐতিহ্যের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিভিন্ন সময়ে এখানে পাঠদান করেছেন দেশের খ্যাতনামা শিক্ষকবৃন্দ। তাদের মধ্যে অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, লেখক হায়াৎ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক , রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।

এখান থেকে পড়াশোনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করেছেন অনেক কৃতি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- নাট্যকার সেলিম আল দীন, অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী, অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, বিজ্ঞানী এ এ মামুন, লেখক ড. সৌমিত্র শেখর, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম ও শারমিন আক্তার সুপ্তা, জাতীয় মহিলা দলের সাবেক ফুটবলার ও ফিফা রেফারি জয়া চাকমাসহ বহু দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব।

‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসেবে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জগতে বিভিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি, চলচ্চিত্র আন্দোলন, গানের সংগঠন জলসিঁড়ি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন, জাহাঙ্গীরনগর সিনে সোসাইটিসহ বহু সংগঠন।