স্থানীয়দের ডেকে ইবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

স্থানীয়দের ডেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাগবিতণ্ডার জেরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে স্থানীয়রা। এতে প্রায় ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন। এ হামলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কিছু বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে তিনি ১৫-২০ স্থানীয় লোকজনসহ রাত সাড়ে ৮টায় এসে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের কামাল নামে স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হন। পরে কামাল পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিলেও স্থানীয় রাজুসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রসহ হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শৈলকূপা থানার অধীন রামচন্দ্রপুর ক্যাম্প থেকে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

এসআই শামীম হাসান বলেন, ‘আমি প্রক্টর স্যার ও থানা থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। বুধবার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।’

এদিকে রাতে এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মিলিত হয়।

এ সময় সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদ হোসেনের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও প্রক্টরিয়াল বডির অনুপস্থিতির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

মিছিলে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগীরা জানান, এর আগেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের দ্বারা হেনস্তার শিকার হলেও প্রশাসন কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা এর সুষ্ঠু বিচার ও সমাধান চান। এ সময় তারা অভিযুক্ত জাহিদ হোসেনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

পরে রাত দেড়টায় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। একইসঙ্গে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে বসার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া। সেখানে যথাসময়ে না যাওয়া  এক প্রকার দায়িত্বে অবহেলা। প্রক্টরিয়াল বডি কেন ঘটনাস্থলে দেরিতে গেলো জবাব দিতে হবে এ সময় সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করায় জবাব চান শিক্ষার্থীরা।

সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে। আমাকে জানানো হয়েছে দেরিতে। আমার যাওয়ার চেয়ে সেখানে নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে জানিয়েছি। আমার যেতে একটু দেরি হয়েছে আমি স্বীকার করছি।’

অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। কারও গায়ে হাত দেওয়া উচিত বলে মনে করি না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমারও দাবি, থাকবে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিষয়ে প্রশাসন যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে প্রশাসনকে বিষয়টি জানাবো।’