অনশনস্থলে ‌‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’র আলপনা আঁকলেন শাবি শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু‌ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা যেখানে বসে টানা ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করেছিলেন, সেখানে ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’র স্লোগানের আলপনা আঁকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই আলপনার কাজ করেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যের বাসভবনের গেটের সামনে অনশনের বসেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ শিক্ষার্থীকেও ওই দিন সকালে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। 

আরও পড়ুন: কাটেনি ধকল, শাবিপ্রবির অনশনকারীরা চলছেন চিকিৎসকের পরামর্শে

এরপর অনশনরত ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে প্রস্থান করেন। তবে শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, অনশনের স্মৃতি ধরে রাখতে সেখানে একটি আলপনা আঁকা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আলপনার কাজ করেন শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনের অনত্যম মুখপাত্র উমর ফারুক বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দা‌বি আদায় করতে যে ২৮ শিক্ষার্থী জীবন বা‌জি রেখে অনশন করেছেন, তাদের সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ। ক্যাম্পাসের বি‌ভিন্ন জায়গায় এমন প্রতিবাদী আলপনা আরও আঁকা হবে।

এদিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কে আঁকা এই আলপনায় ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ লেখার ওপর এক‌টি স্ট্যান্ডে স্যালাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এক কিলোমিটার রাস্তায় আলপনা আঁকেন শিক্ষার্থীরা। আলপনার জন্য তারা সন্ধ্যার আগে থেকেই তাদের অনেকেই রঙ-তুলিসহ প্রযোজনীয় জিনিস নিয়ে একত্রিত হতে থাকেন। মধ্যরাত পর্যন্ত এ আলপনায় কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে যখন অহিংস আন্দোলন করি, আমাদের তখনকার অবস্থা, আমাদের মনোবল এবং দৃঢ় প্রত্যয় বুঝানো হয়েছে আলপনায়। 

আরও পড়ুন: কার নির্দেশে শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা?

চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরের রাস্তায় প্রতিবাদী স্লোগান লেখেন। গোল চত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা সহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির আয়োজন করেন। আন্দোলন পরবর্তী ‌‘কেমন শাবিপ্রবি চাই’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হিসেবে ক্যাম্পাসের চলমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আন্দোলন পরবর্তী কী কী সমাধান দরকার, তা নিয়েই আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা।

‘কেমন শাবিপ্রবি চাই’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়

আলোচিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ক্যাম্পাসের বাইরের হলগুলোর ভাড়ার মধ্যে ভারসাম্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা, খাবারের সমস্যা সমাধান, হল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সম্ভব হলে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করা, বছরে ৩৬৫ দিন হল খোলা রাখার ব্যবস্থা করা, হল রিডিং রুমের ব্যবস্থা, করোনার মধ্যে হলের সিট ভাড়াসহ বিবিধ সেবার ফি মওকুফ, ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান চালু করা, হলের মসজিদের ফ্যাসিলিটি বাড়ানো ও কেন্দ্রীয় মন্দির নির্মাণ

আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র মোহায়মিনুল বাশার রাজ বলেন, আশা করি, শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করতে আসবেন আমাদের ক্যাম্পাসে। আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।