X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার নির্দেশে শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা?

নাজমুল হুদা, শাবি
২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:১২

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালিত হয়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই পরিচালিত হয়ে আসছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলাজনিত বিষয়াদি দেখার জন্য প্রক্টরিয়াল বডিও রয়েছে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন কিংবা অবস্থান করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি লাগে।

এসব নিয়মকানুন থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়। পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করে। পুলিশ শুধু প্রবেশই করেনি, ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপও করেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।  

তবে কি এমন হয়েছিল যে পুলিশকে লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয়েছে? কিংবা কার নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে? আসলে এই দায় কার? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশি হামলার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু গুলি ছুড়তে, লাঠিচার্জ কিংবা গ্রেনেড ছুড়তে অনুমতি দেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। 

তবে পুলিশের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি ও পুলিশের ওপর শিক্ষার্থীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ গুলি ছোড়ার বিষয়ে বলেন, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। তবে এ সময় শিক্ষার্থী কিংবা অন্য কেউ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমরা উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাসভবনে পৌঁছে দিই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সবকিছু উপাচার্যের নির্দেশে পরিচালিত হয়। এর বাইরে উপাচার্যের সঙ্গে পরামর্শ করে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক বডি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক সর্বোচ্চ ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে। এর বাইরে ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টরিয়াল বডিসহ মাঠ প্রশাসনও সময় ও পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তবে মাঠ প্রশাসনকে অবশ্যই উপাচার্যকে বিষয়টি অবহিত করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে কারও অনুমতি ছাড়া পুলিশ ক্যাম্পাসে গুলি কিংবা সাউন্ড বোমা ছুড়তে পারে না বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনিয়র শিক্ষক। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গুলি কিংবা গ্রেনেড ছুড়তে পারে না। উপাচার্যের নির্দেশেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং গ্রেনেড ছুড়েছে। 

 আন্দোলনকারীদের পক্ষে নাফিসা আঞ্জুম নামে এক শিক্ষার্থী প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, সেদিনের হামলার ঘটনা উপাচার্যের মদতেই ঘটেছে। পুলিশ হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। প্রশাসনের নির্দেশের পরপরই আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়া হয়। টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় শিক্ষার্থীদের, করা হয় লাঠিপেটা।

শিক্ষকদের দাবি, একদল স্বার্থেন্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বাধীন এক শিক্ষক বলেন, এ ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই দায়ী। পুলিশকে প্রশাসনই নিয়ে এসেছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ক্যাম্পাসে গুলি ছুড়েনি, তারা পারেও না গুলি ছুড়তে। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই শিক্ষক। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। 

ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ যারা এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের কাছ থেকে ছবি, ফুটেজ বা প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি। এমনকি তথ্যদাতার পরিচয় গোপন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বুধবার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিনদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা হলে প্রতিবাদ জানিয়ে ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, গণস্বাক্ষর, আমরণ অনশন, মশাল মিছিল, উপাচার্যের কুশপুতুল দাহ, কাফন মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

 

/এএম/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!