শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার

দীর্ঘ ২৭ দিন পর ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ও শিক্ষামন্ত্রীর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মোহায়মিনুল বাশার রাজ।
 
তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের আমন্ত্রণে শাবিপ্রবিতে এসেছিলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি সব দাবি আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন এবং আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের ছয়টি দাবি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথম দাবি ছিল- উপাচার্যের (অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ) পদত্যাগ। মন্ত্রী এই বিষয়ে বলেছেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই আমরা আশা করছি, আচার্য শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের কথা বিবেচনায় রাখবেন।’

মোহায়মিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর পৃথক দুই মামলার বিষয়ে মন্ত্রী অতিদ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকার বিষয়ে আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে সব নম্বর ও মোবাইল ব্যাংকিং সচলের আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশের স্প্লিন্টারে আহত সজল কুন্ডুসহ অনশনকারীদের সুচিকিৎসা চলমান আছে এবং থাকবে। পাশাপাশি সজল কুন্ডুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আমাদের সব দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ায় এবং এতে পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিলাম। পাশাপাশি আমাদের দাবি পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম। আগামীকাল (রবিবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ক্লাস/পরীক্ষা শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের প্রভোস্টকে সরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালালে, পরের দিন হামলার প্রতিবাদ ও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন উপাচার্যকে উদ্ধারে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই দিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনেও বসেন। ১৬৩ ঘণ্টা অনশনের পর গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন। তবে দাবিতে অনড় থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যান।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সিলেট সার্কিট হাউসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য, ডিন, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপাচার্যকে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। সে অনুযায়ী উপাচার্য দুঃখও প্রকাশ করেন।