সজলকে ৭৫টির বেশি স্প্লিন্টার নিয়ে বাঁচতে হবে 

গত ১৬ জানুয়ারি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার ঘটনায় শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ৮৩ টির অধিক স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। সম্প্রতি অস্ত্রোপাচারে ডান হাত থেকে চারটি স্প্লিন্টার অপসারিত হলেও একমাস পর এখনও ৭৫টির অধিক স্প্লিন্টার শরীরে রয়েছে তার। তবে প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কায় অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। এ অবস্থায় বাকি স্প্লিন্টারগুলো শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে সজলের। 

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্ততি এসব তথ্য জানান সজল কুন্ডু।

সজলের ভাষ্যমতে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সজল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ফিরেছে। ৭৫টির অধিক স্প্লিন্টার রয়েছে শরীরে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কায় অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসার বিষয়ে সজল বলেন, মারাত্মক আহত অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি থেকে সিলেটে চিকিৎসা শুরুর পর গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা চলে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ডান হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে চারটি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়। এখনও তার মাথা, ঘাড়, বুক, পেট-পিঠ, হাত-পাসহ শরীরে বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কায় চিকিংসকেরা আরও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে নতুন নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের কথা তুলে সজল কুন্ডু আরও জানান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে তাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, তার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। চাকরি প্রদানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনও স্পষ্ট আশ্বাস বা পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

নিজের পারিবারিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে সজল আরও বলেন, আমার বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে নিয়ে অস্বচ্ছল পরিবার আমার। সম্প্রতি কিছু টাকা ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে এক সময় সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে যে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের দিনগুলো কীভাবে সে দুশ্চিন্তা নিয়ে আমাকে দিন কাটাতে হচ্ছে। এর দায় কে নেবে?

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সজল বলেন, গত ১২ তারিখে আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের সব দাবির বিষয়ে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তা অচিরেই খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলাসমূহ প্রত্যাহার কিংবা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রিতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এছাড়াও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ যে মিথ্যাচার ও মনগড়া কথা বলেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। 

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরুজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ড. এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। অবরুদ্ধ অবস্থায় সেখানেই সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এমনকি রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেন্ডে ছুড়ে পুলিশ। এতে গুরুতর অসুস্থ সজলসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। পরে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ওই অবস্থায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অনশণ ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। তবে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।  পরে শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এখন পর্যন্ত মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবিসমূহ মেনে নিতে কোনও পদক্ষেপ বা উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।