কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য?

দীর্ঘ আট বছর পর গত ১২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আমির হোসেন প্রথম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূরুল আলম দ্বিতীয় ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার তৃতীয় হন। তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দুটি ভিন্ন প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে মনোনীত তিন জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি যেকোনও একজনকে চার বছর মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

সর্বশেষ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচনের ১০ দিন পর ২ মার্চ অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এবার প্যানেল নির্বাচনের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও হয়নি উপাচার্য নিয়োগ।

এদিকে, প্যানেল নির্বাচনের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব অংশীজনেরাই আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা চান দ্রুত গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক স্থবিরতা দূর হোক। তাদের প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের প্রয়োজন বুঝবেন, রাজনৈতিক দলান্ধ নয়, শিক্ষার্থীদের যোগ্য অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে পারবেন এমন সৎ, যোগ্য, কর্মনিষ্ঠ শিক্ষকই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।

এই তিন জনের মধ্যে উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন প্যানেল নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া আমির হোসেন ও নূরুল আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছেন এই দুই শিক্ষক। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি দুজনই সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। 
দুজনের বিরুদ্ধে নেই কোনও অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ। তাদের দক্ষতা নিয়েও নেই কোনও প্রশ্ন। তবে সম্প্রতি সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা অজিত কুমার মজুমদার এই দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিই নিজ ক্ষমতাবলে উপাচার্য নির্ধারণ করবেন।

উপাচার্য কবে নিয়োগ হতে পারে এ বিষয়ে জানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক নূরুল আলম ও চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। অধ্যাপক আমির হোসেনের বলেন, ‘ফাইল মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছেছে কি-না এই বিষয়ে এখনও জানি না। আশা করছি, দ্রুত এই বিষয়ে ঘোষণা আসবে।’

এক নজরে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে জয়ী হওয়া তিন শিক্ষক

অধ্যাপক আমির হোসেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক অধ্যাপক আমির হোসেন। তিনি ১৯৮০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও ১৯৮২ সালে স্নাতকোত্তর, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা থেকে ১৯৮৫ সালে পুনরায় স্নাতকোত্তর ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে ১৯৯৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে প্রভাষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন ও ২০০০ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডিন, অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, শিক্ষক সমিতির দুইবারের নির্বাচিত সম্পাদক, তিনবার নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ও অর্থ কমিটির সদস্য হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। 
এ ছাড়া ২০১১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অধ্যাপক মো. নূরুল আলম

অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ১৯৮২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন ও ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হল প্রভোস্ট, গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষদের ডিন, অর্থ কমিটি, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন।

অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের ছাত্র। তিনি কানাডার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ছয়বারের নির্বাচিত সভাপতি। এ ছাড়া গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের নির্বাচিত ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।