কথা রাখেনি শাবি কর্তৃপক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া ফেরত চান স্প্লিন্টারবিদ্ধ সজল

‘পেটে লাথি মারা বন্ধ হোক’ এবং ‘সহানুভূতি নয় অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। ১৬ জানুয়ারি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পুলিশি হামলায় ৮৩টি স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হন তিনি। বর্তমানে তার শরীরে এখনও ৭৫টি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। 

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন তিনি। এসময় তিনি প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওযার ঘোষণা দেন তিনি।  

দাবির বিষয়ে সজল বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটির ক্যাফেটেরিয়া চালাতাম। কিন্তু বিভিন্ন আইনি ও সিদ্ধান্তগত জটিলতার কথা বলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর আমার ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমি মনে করি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো ও দাবির অংশ হওয়ায় ‘কৌশলগতভাবে ক্যাফেটেরিয়া ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ 

এদিকে হামলার পরের দিন ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে’ বলে জানানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধুমাত্র একদিন অ্যাম্বুলেন্স সেবা ছাড়া আর কোনও সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন সজল।

সজল আরও বলেন, ১৬ জানুয়ারির ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত ২০০/৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা হয়েছিল। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা উঠিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে এখনও তা প্রত্যাহার করা হয়নি। 

সজল বলেন, ‘মামলাগুলো না উঠালে যেকোনো সময় যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ।’  তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রী একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এ বিষয়ে কোনও তৎপরতা নেই বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ এনে ছাত্রীরা পদত্যাগের দাবি জানান। পরে ১৬ জানুয়ারি চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনেকে আহত হন।  এ সময় সবচেয়ে গুরুতর আহত হন ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। শরীরে বিভিন্ন জায়গাতে আঘাতসহ ৮৩টি স্প্লিন্টারবিদ্ধ হন তিনি। অস্ত্রপাচারে ৮টি স্প্লিন্টার সরানো সম্ভব হলেও এখনও শরীরে ৭৫টি স্প্লিন্টার রয়েছে।