জাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রীদের অবস্থান

অবিলম্বে আবাসিক হলে সিটের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রীতিলতা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল ও শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীরা।

রবিবার (২৭ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।

এর আগে ছাত্রীরা হলগুলোর সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছয় মাসের অধিক সময় এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই বছর ধরে গণরুমে অবস্থান করছেন। গণরুমের অপরিষ্কার পরিবেশ, ফ্যান ও জানালা সংকটে তীব্র গরমে প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

এ ছাড়া পড়াশোনার জন্য চেয়ার-টেবিল ও সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় তাতে ব্যাঘাত ঘটছে। এর প্রেক্ষিতে হলে নিজেদের সিটের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছে শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মহসীনা মীম জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে গণরুমে আছি। গণরুমে থেকেই অত্যন্ত কষ্ট করে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছি। দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হতে চলেছে অথচ আমরা এখনও সিট পাইনি। হল প্রশাসন আমাদের বারংবার আশ্বাস দিয়েও সিট দিতে ব্যর্থ।

খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার রুনা বলেন, নতুন হলগুলো প্রস্তুত থাকলেও এখনও চালু করা হচ্ছে না। কবে চালু হবে, সেটাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি। গণরুমে আমাদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা দ্রুত সিট চাই।

শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার মুন বলেন, আমাদের দ্রুত গণরুম থেকে তুলে নিয়ে হলে সিট দিতে হবে। খাট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা গণরুমে ফ্লোরিং করে ঘুমাচ্ছি। এ ছাড়া হলের নোংরা পরিবেশ, পর্যাপ্ত ফ্যান ও জানালা না থাকায় গরমে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। বাধ্য হয়ে এবার আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

এদিকে রাত ৯টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, রেজিস্ট্রার আবু হাসান, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শারমিন সুলতানা উপস্থিত হন। 

এ সময় খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শারমিন সুলতানা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের সমস্যা নিয়ে তো আমার সঙ্গে আগে বলতে হবে। আমরা তোমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবো।

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা তোমাদের সিট সংকট দূর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন হল থেকে লোকবল নিয়ে নতুন হল চালু করেছি। ইতোমধ্যেই ছাত্রীরা নতুন হলে উঠেছে। তোমাদেরও সিটের ব্যবস্থা হবে। ধৈর্য ধরতে হবে৷

তবে ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা হল প্রভোস্টের সঙ্গে কোনও প্রকার আলোচনা করবেন না বলে জানান৷

পরে রাত ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম অবস্থান স্থলে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যসহ শিক্ষকরা ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের পথে বাধাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেন।

উপাচার্য বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউজিসির সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ইউজিসি থেকে হলের গার্ড, অ্যাটেন্ডেন্ট পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে আবার ডেইলি বেসিসে নিয়োগ দেওয়াও বন্ধ করা হয়েছে। ইউজিসি ছাড়া লোকবল নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই লোকবলের অভাবে হল প্রস্তুত থাকলেও আমরা সেগুলো চালু করতে পারছি না। আগামী ২৭ তারিখ আমরা আবার ইউজিসিতে যাবো। এ বিষয়টি নিয়ে তখনও আলোচনা করা হবে। তোমাদের দাবি আর আমাদের দাবিতে কোনও পার্থক্য নেই। আশা করি দ্রুত সমাধান পাবো।

পরে উপাচার্য সেখান থেকে চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শিক্ষার্থীদের পুনরায় বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে প্রক্টর আগামী ২৭ জুলাই ইউজিসি বিষয়টির সমাধান না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইউজিসিতে যাবেন বলে আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে।