ছাত্রলীগ নেতা খালেদ হত্যা: ৭ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি চার্জশিট

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার চার্জশিট সাত বছরেও চূড়ান্ত হয়নি। সাত বছরে চার বার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন, চার্জশিটে কখনও আসামি বাদ, কখনও নতুন আসামি যুক্ত কখনও আদালতে না-রাজিতে কেটেছে এই দীর্ঘ সময়। তবে খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ। তার বাড়ি দাউদকান্দি উপজেলায়।

ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার বাদী হয়ে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সদর দক্ষিণ থানায় মামলা করেন। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি রুপম চন্দ্র দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ, ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল আলম, লোকপ্রশাসন বিভাগের আবুবকর ছিদ্দিক, সুদীপ্ত নাথ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সজন বরণ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। তিন দিন পর মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র বিপ্লব চন্দ্র দাসকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংস্থাটি ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। এই চার্জশিটে নারাজি দেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। আবারও তিনিই নারাজি দেন চার্জশিটের বিষয়ে। এরপর মামলাটি পিবিআই থেকে সিআইডিতে যায়। সেখানের চার্জশিটেও নারাজি দেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআইতে আসে। এখনও মামলার তদন্ত চলছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘খালেদ সাইফুল্লাহর মায়ের দেওয়া বারবার নারাজির কারণে এখনও বিচারকার্য শুরু হচ্ছে না। এখন মামলা পিবিআইতে আছে।’

বারবার নারাজি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের ভুল বুঝিয়ে আদালতে দুই বার নারাজি দিতে বলেছেন। তবে সর্বশেষ নারাজি আমি জেনে বুঝেই দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, যারা ঘটনার মূল হোতা তাদের নাম চার্জশিটে আসেনি। তাই নারাজি দিয়েছি। তবে পূর্বের দুটি নারাজি ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে ভুল বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা তদন্ত কাজ করেছি। আমাদের তদন্তের কাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব শিগগির আদালতে চার্জশিট দেবো।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিষয়টা তদন্তাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করবো না। আমরা চাই সুষ্ঠু বিচার হোক।’