শতবছরে ঢাবির আরবি বিভাগে নারী শিক্ষক মাত্র দুজন, বর্তমানে একজনও নেই

প্রতিষ্ঠালগ্নে যে কয়টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল, তার মধ্যে আরবি বিভাগ অন্যতম। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, শতবর্ষ পার করা এ বিভাগে এখন পর্যন্ত নারী শিক্ষক ছিলেন মাত্র দুজন। আর বর্তমানে বিভাগটিতে কোনও নারী শিক্ষকই নেই। সংশ্লিষ্ট বলছেন, বিভাগটিতে নারী শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়া ও যোগ্য প্রার্থী না থাকায় নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও নারী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার একটি ‘সংস্কৃতি’ও তৈরি হয়েছে। তবে অভিযোগ আছে, ‘লবিংয়ে’ পিছিয়ে থাকাসহ নানান কারণে পুরুষ প্রার্থীদের সাথে নিয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন যোগ্য নারী প্রার্থীরাও।

জানা যায়, বিভাগটিতে প্রথম নারী শিক্ষক ছিলেন ড. ফাতেমা সাদেক। তিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অন্যজন অধ্যাপক সায়েরা খাতুন। তিনি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে শিক্ষকতা শুরু করে ২০০৮ সালে অবসরে যান। বর্তমানে বিভাগটিতে ২৪ জন শিক্ষক কর্মরত। এর মধ্যে কোনও নারী শিক্ষক নেই।

এদিকে, নারী শিক্ষক না থাকায় বিভাগের ভর্তি হওয়া নারী শিক্ষার্থীরাও নানান সমস্যা পড়েন। নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে অনেকেই পুরুষ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাছাড়াও বিভাগটিতে বিগত কয়েক বছরে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের নারী শিক্ষক না থাকার কারণে আমরা অনেক কিছু শেয়ার করতে পারি না। ক্লাসরুমে এমনও হয়েছে যে মেয়েদের যে শারীরিক সমস্যা হয় সেসময় পুরুষ শিক্ষক ক্লাস করাচ্ছেন। স্যারদের বলে বের হওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সমস্যার মধ্যে এমন সমস্যাগুলোও আমরা ফেস করি।’

জানতে চাইলে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক যুবাইর মোহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, বিভাগে নারী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার কোনও সংস্কৃতি নেই। বরং যোগ্য হলে নারী বা পুরুষ কোনও বিষয় নয়।

তিনি বলেন, নারী শিক্ষক কম হওয়ার কারণ আমাদের নারী শিক্ষার্থী কম ছিল। আমাদের সময় শুধু একজন মেয়ে ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন বিভাগের ২৫ থেকে ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীই নারী।

অধ্যাপক যুবাইর মোহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, নারী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের চাওয়া না চাওয়া কোনও বিষয় নয়। কেননা শিক্ষক নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রশাসন। সেই বডিতে শুধুতে বিভাগের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন। তাই যোগ্য প্রার্থী পাওয়া গেলে অবশ্যই নিয়োগ দেওয়া হবে।

তবে এমন অজুহাত মানতে নারাজ এই বিভাগ থেকে ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথম স্থান অর্জনকারী খন্দকার নুরুল একা উম্মে হানী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও মহান স্বাধীনতা ও উন্নয়নের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে বিভাগের শিক্ষক হওয়া হয়ে ওঠেনি।’