বিজয় দিবসের খাবার বিতরণ নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বিজয় দিবস উপলক্ষে খাবার বিতরণের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় হলে এই মারামারির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টায় খাবার বণ্টনের দায়িত্বে শুধুমাত্র মেজবাউল হক শান্ত গ্রুপের সদস্যরা থাকায় এনায়েত উল্লাহর গ্রুপের সঙ্গে এই নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরপর এই ঘটনার ধরে বিকাল ৪টায় শান্ত গ্রুপের কর্মীরা এনায়েত গ্রুপের রবিন দাসকে হলের চতুর্থ তলায় এসে মারধর করে।

মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- শান্ত গ্রুপের রবিউল আলম রিয়াজ, আলভীর ভূঁইয়াসহ একই গ্রুপের অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা। এরপর এনায়েত গ্রুপের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে চতুর্থ তলায় এলে প্রতিপক্ষ দৌড়ে পঞ্চম তলার ৫০২ নম্বর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিসহ ঘটনাস্থলে আসে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে রবিন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।

শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-নাট্য বিষয়ক সম্পাদক মো. রবিউল আলম রিয়াজ দাবি করেন, ছাত্রলীগের নির্দেশে মহান বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম শেষ করে আসার পর প্রশাসন থেকে সামাজিক খাবারের ব্যবস্থা করলে আমরা সেখানে অংশগ্রহণ করি। তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী বিপরীত সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের হলের প্রভোস্ট স্যারের ওপর চড়াও হয়। প্রশাসন তাদের থামায় এবং আমরা যে যার রুমে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর আমি আর আমার বন্ধু আলভীর ওয়াশরুমে যেতে চাইলে রবিন দাসের ভাই আমাদের টিজ করতে করতে গায়ে হাত তোলে। একইসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে এসে আক্রমণ করতে থাকে। আমার মনে হয়েছে এটা পরিকল্পিত। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম আলভীর ভূঁইয়া দাবি করেন, দুপুরে খাবার বিতরণ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয় ১৩ ব্যাচের রবিউলের সঙ্গে। এটার পর আমি এবং রিয়াজ বাইরে যাওয়ার সময় চতুর্থ তলায় ওয়াশরুমের সেখানে আবার বাগবিতণ্ডা হয় ১৩তম আবর্তনের রবি ভাইয়ের সঙ্গে। তারপর ১২তম আবর্তন এবং ১৩তম আবর্তনের ভাইরা এসে রিয়াজকে মারধর করে। তখন রিয়াজ পঞ্চম তলায় আমার রুমে চলে আসে। পরে আবার তারা পঞ্চম তলায় এসে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। হামলাকারীদের মধ্যে ছিল সোহাগ ভাই, ওয়াকিল ভাই, রাব্বি ভাই, রবি ভাই ও এমদাদ ভাই।

এ বিষয়ে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমি ক্যাম্পাসে নেই তবে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। এটি আসলে ছাত্রলীগের কোনও ঝামেলা না। এটি সিনিয়র-জুনিয়রের ঝামেলা। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত বলেন, হলের সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে ঝামেলা। অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণেই তাদের দুইটা গ্রুপ হয়ে যায়। বিষয়টা রাজনৈতিক কিছু না। যারা ঝামেলা করেছে দুই পক্ষেই আমার অনুসারী আছে। বাগবিতণ্ডার কারণে ঘটনা এতদূর গড়িয়েছে। প্রক্টর স্যারসহ আমরা বসে ব্যাপারটা সমাধান করবো।

এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যারা মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দুই গ্রুপই নিজেদের মধ্যে সমাধান করার জন্য সময় চেয়েছে। তাছাড়া হলের সিসিটিভি ক্যামেরার সাহায্যে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর দেওয়া হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, যেহেতু হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এ বিষয়ে প্রভোস্ট স্যার যে সহযোগিতা চাইবেন প্রক্টরিয়াল বডি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।