এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে মধ্যরাতে বিছানাপত্রসহ এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার (১৮ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪০২ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে রবিবার (১৯ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন ভুক্তভোগী। ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. কুদ্দুস ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. ফজলে রাব্বি এবং তার ৮/১০ জন অনুসারী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
ফেসবুক পোস্টে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একজন অনাবাসিক ছাত্র। বিভাগের বড় ভাইয়ের নামে বরাদ্দকৃত ৪০২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলাম। সম্প্রতি আবাসিকতার জন্য হল আবেদন করি। প্রাধ্যক্ষ আবেদন গ্রহণ করে ওই সিটে থাকতে বলেন। আগামী মাসে বিভাগের ওই বড় ভাই সিট বাতিল করলে আমার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জোর করে আমাকে সিট থেকে নামিয়ে দিয়ে অন্য একজনকে উঠিয়ে দেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুদ্দুস ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম। পরে পোস্টটি ডিলিট করেছি। কারণ এ নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা। আমাকে তারা আশ্বস্ত করেছেন, দ্রুত সমাধান করবেন।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফজলে রাব্বি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুদ্দুস যে সিটে থাকতো সেখানে তার সঙ্গে আরও একজন ছাত্র থাকতো। তারা আমার কাছে সমাধান চাইতে এসেছিল। আমি তাদের বলেছি, এ ব্যাপারে হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত দেবে। আমাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এরপর তারা চলে যায়।’
মধ্যরাতে কুদ্দুসের বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে রাব্বি বলেন, ‘এর সঙ্গে ছাত্রলীগ বা আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। কারা নামিয়ে দিয়েছে, তা আমি জানি না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে এখন কোনও কথা বলতে চাই না। খোঁজখবর নিয়ে তারপর কথা বলবো। আর ফোনে আমি কোনও কথা বলবো না।’
ওই শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। দ্রুত খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’
এর আগে গত বুধবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে বিছানাপত্র নামিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যস্থতায় ওই শিক্ষার্থীকে আবার সিটে তুলে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম লাদেন রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।