‘গাঁজা সেবনে’ বাধা দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩

‘গাঁজা সেবনে’ বাধা দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বরে মুক্তমঞ্চের পেছনে কয়েকজনকে নিয়ে গাজা সেবন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন। এ সময় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান পুলক ও আলী আকবর ফয়েজী অপু বাধা দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলক হেলমেট দিয়ে বন্ধনের মাথায় আঘাত করলে মাথা ফেটে কিছুটা রক্তপাত হয়।

পরে বন্ধন কল করলে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী আকাশ ও সানিসহ ১০-১৫ জন ঘটনাস্থলে আসেন। তারা অপু ও পুলককে মারধর করে এবং চারুকলা সংলগ্ন রফিকের ক্যান্টিনে ভাঙচুর চালান। এ সময় দোকানদার রফিকও সামান্য আহত হন। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে পুলক, বন্ধন ও অপু তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। ঘটনাটি সমাধানে প্রক্টর দফতরে আলোচনায় বসেন ছাত্রলীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

জানতে চাইলে সৌরভ শেখ বন্ধন বলেন, আমরা চারুকলায় বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ক্যাম্পাসের কয়েকজন আমার কাছে জানতে চায়, তোরা কারা? কী করতে এসেছিস এখানে? আমরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। তারপর সেখানে অপু ভাই এবং পুলক ভাই উপস্থিত হন। তখন তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং আমার কাপড় ধরে টানাটানি ও চড়থাপ্পড় দেন। আমার জামা ছিঁড়ে যায়। একজন ধারালো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং আমার মাথা ফেটে যায়।

আলী আকবর ফয়েজী অপু বলেন, ছোট ভাইদের সঙ্গে ওদের কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল সেটা জানি না। আমি ঘটনাস্থলে মীমাংসা করার জন্য উপস্থিত হয়ে তাদের বলেছি, তোমরা চলে যাও। তখন ওরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। ওরা আমার মোটরসাইকেল ভাঙচুর শুরু করে। পরে সেখানে পুলক উপস্থিত হলে ওর ওপরও আক্রমণ করে।

মেহেদী হাসান পুলক বলেন, আমি পুরো ঘটনা জানি না। আমাকে কল করে জানানো হয়, ক্যাম্পাসের কোন ছোট ভাইয়েরা অপু ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করছে। উপস্থিত হয়ে দেখি বন্ধনসহ কয়েকজন ছিল। আমি বন্ধনকে আগে থেকেই চিনতাম। আমি ওকে বলেছি, তুমি মনে হয় আমার জুনিয়র এবং অপু ভাই হলেন আমার সিনিয়র। এসময় ‘তুই তুকারি’ বাদ দিয়ে ভালোভাবে কথা বলতে বলায় তারা আমার দিকে তেড়ে এসে বলে কী করবি? এরপরে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ৪/৫ জন মিলে মারধর শুরু করে। মারধরের এক পর্যায়ে আমরা পাশের রফিক ভাইয়ের দোকানে চলে যাই। এর মধ্যে বন্ধনেরা বাঁশ, লাঠি হাতে প্রায় ৪০-৫০ জন উপস্থিত হয়ে রফিক ভাইয়ের দোকানে এসে আমাকে ও অপু ভাইকে মারধর করে। পরে অপু ভাইয়ের গাড়িও ভাঙচুর করে।’

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঘটনার কথা শুনে এখানে আসার পর শুনি বহিরাগতরা (চারুকলার শিক্ষার্থী না) বসে গাঁজা খাচ্ছিল। আমাদের কিছু ছাত্র এখানে বসা ছিল। তারা গাঁজা খেতে নিষেধ করাতে এখানে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়।’

প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘শুনেছি গাজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। যেহেতু ঘটনাটি চারুকলা অনুষদের ভেতরে ঘটেছে, তাই আমি তাদের বলেছি, ডিন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিতে। ডিন এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তারপর আমরাও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব বলেন, আমরা মেডিক্যাল থেকে তাদের প্রক্টর দফতরে নিয়ে গেছিলাম। সেখানে ওদের ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সাথে ছাত্রলীগের কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না।