রাবি শিক্ষক সুজনের অপসারণ দাবি চেয়ে ছবি আঁকার চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক ড. সুজন সেনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, চারুকলার যে কোনও একজন শিক্ষার্থী দাঁড়াবে, অন্যদিকে সুজন সেন দাঁড়াবেন। যদি সুজন সেন শিক্ষার্থীর চেয়ে ভালো ছবি আঁকতে পারেন তাহলে আমরা সব আন্দোলন প্রত্যাহার করবো। তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনবো।’ 

রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ড. সুজন সেনের অপকর্মের নিরপেক্ষ তদন্ত ও অপসারণের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। ড. সুজন সেনকে অযোগ্য, স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, দালাল ও চাটুকার আখ্যা দিয়ে বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে ড. সুজন সেনকে চ্যালেঞ্জ করা আবু রায়হান নামের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘ড. সুজন সেনের বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা কমিটিকে নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, আপনাদের এই তদন্ত যদি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে কোনোভাবেই মেনে নেবো না। আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।’ 

মানববন্ধনে বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা আজকে একজন অযোগ্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখানে দাঁড়িয়েছি। গত পাঁচ বছরে তাকে ক্লাসের কোনও কাজ শিখিয়ে দিতে দেখিনি। আমাদের বেশিরভাগ কাজ ব্যবহারিক। কিন্তু আমরা তাকে ব্যবহারিক কাজে কখনও দেখিনি। যারা সুজন সেনের পক্ষে দালালি করছে আমরা তাদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, অযোগ্য কারও পক্ষে দালালি করবেন না। এর ফল ভালো হবে না। আমরা সমুচিত জবাব দেবো। শিক্ষার্থীরা আপনাদের প্রতিপক্ষ না। আমি চাই প্রশাসন স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করুক। তবে সুজন সেনের যতদিন পর্যন্ত চাকরিচ্যুতি না হচ্ছে, আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’

চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আসিফা পারভিন পুঁথি বলেন, ‘চারুকলার শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও সুজন সেন কখনও আমাদের পেজগুলোতে একটি পেন্সিলের দাগও দিয়ে দেখাননি। এখানে তার যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। কখনও শিক্ষার্থীদের কথা ভাবেননি বরং স্বেচ্ছাচারিতা ও চাটুকারিতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে তার উচিত ছিল শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। এমন অযোগ্য শিক্ষকের আমরা অপসারণ চাই।’ 

বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আসাদ সাদিক রাফি বলেন, ‘সুজন সেনের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের আজকে ১৮ দিন হলো। কিন্তু তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের যোগাযোগ করেনি। আসলে কী তারা এসি রুমে বসে তদন্ত করতেছেন? এ ধরনের তদন্ত আমরা মেনে নেবো না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী নৈতিকতার স্থলন ঘটলে তাকে অপসারণের সুযোগ আছে। আমরা চাই, এই আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।’  

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কুয়াশা, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জনি ও মো. সাকিবুল বক্তব্য দেন। এ সময় বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ড. সুজন সেনকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগের সভাপতির কাছে প্রমাণসহ প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার এক লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর জরুরি সভায় সুজন সেনকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তার অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে ১৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে দেয়।