কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজিজুুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩ ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তার কয়েকজন সহকর্মী। একইসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। গত তিন দিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা। বিভাগের সভাপতি এবং একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অভিযুক্তকে বাঁচাতে তদবির করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় তদবির করা শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগ দেন বিভাগটির দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে তদবির করছেন বিভাগের সভাপতি এবং একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। তারা অভিযোগকারীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
এর আগে সহযোগী অধ্যাপক আজিজুুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩ ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সেইসঙ্গে ঘটনার তদন্ত করে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে ওই শিক্ষককে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী পাঁচ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বাঁচাতে সমঝোতার জন্য ভুক্তভোগীদের চাপ দিচ্ছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম নাজমুল হুদা ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন। গত মঙ্গলবার বিভাগের সভাপতি ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি বিভাগের বাইরে না জানানোর অনুরোধ করেন। ওই দিন দুপুরে আনোয়ারুল হক আবার ভুক্তভোগীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন এবং সমঝোতার জন্য অনুরোধ জানান। সেইসঙ্গে ভুক্তভোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেন আনোয়ারুল হক। কিন্তু ছাত্রীরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পাশাপাশি তদবির করা শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর আবেদন জানান তারা।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজিজুুল ইসলাম আমাকে লিখিত পরীক্ষার আগের দিন তার কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন, “তোমার ফিগার ভালো, শাড়ি পরলে ভালো লাগবে।” সেদিন তিনি আমাকে তার কথার মাধ্যমে বোঝালেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে। পরে তাকে স্পেস না দেওয়ায় আমার পরবর্তী সেমিস্টার থেকে ফল খারাপ হতে থাকে। যা ইচ্ছে করেই করেছেন ওই শিক্ষক।’
আরেক ছাত্রী বলেন, ‘আজিজুুল ইসলাম আমাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিতো। উদ্দেশ্য খারাপ বুঝতে পেরে আমি তাকে আনফ্রেন্ড করে দিই। পরে ক্লাসে সবার সামনে আমাকে আজেবাজে কথা বলতো। তার কোর্সে ফেল করানোর হুমকি দিতো। বিভাগে প্রথম আমিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু বিভাগের সভাপতি বিষয়টি সমাধান করে দিলেও আমার সঙ্গে একই আচরণ করে আসছিল আজিজুুল ইসলাম। তার সঙ্গে অন্য শিক্ষকদেরও সম্পর্ক ভালো দেখে ভয়ে আমি আর কোনও কথা কাউকে বলিনি। এখন আমরা ১৩ জন অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে বাঁচাতে বিভাগের শিক্ষকরা উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে চাচ্ছেন। এজন্য দুপুরের খাবার খেতে ১৫ হাজার টাকাও দিয়েছেন।’
অভিযুক্তকে বাঁচাতে সমঝোতার জন্য ভুক্তভোগীদের চাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি তাদের নিয়ে বসেছিলাম। ঘটনা গোপন রাখা বা শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা। তবে তাদের নিয়ে আমি দুপুরের খাবার খেতে চেয়েছিলাম। আমিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
একই বিষয়ে জানতে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম নাজমুল হুদার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়েও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক আজিজুুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আপাতত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। আমরা তদন্ত কমিটি করবো। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’