অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি ‘আনসার আল ইসলাম’ বা ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’- এর সঙ্গে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া তরুণরাও জড়িয়ে পড়ছে।
তারা বলছেন, সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তারা তরুণদের আকৃষ্ট করে এবং দলে ভিড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তার নসিহত দিয়ে তাদের উৎসাহিতও করে। জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব আর কিলিং মিশন দুটি ভিন্ন বিষয়। যারা নেতৃত্ব দেয় তারা কিলিং মিশনে অংশ নেয় না। জঙ্গিরা তরুণদের নানাভাবে উৎসাহিত করে কিলিং মিশনে পাঠায়। এছাড়া তরুণরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত পালাতে সক্ষম হবে ভেবেও এটা করা হয়ে থাকতে পারে।
অপরাধ বিশ্লেষক জিয়া রহমান মনে করেন, যেহেতু তরুণদের মনোযোগ দিয়ে কাজ করার প্রবণতা আছে, সে কারণে জঙ্গি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যখন কোনও স্লিপার সেল তৈরি করে, তখন তারা তরুণদের কথাই ভাবে। প্রযুক্তিতে ভীষণ দক্ষ তরুণদের একটা গোষ্ঠী এখনকার এই প্রক্রিয়াগুলো পরিচালনা করছে বলেও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কিলিং মিশনে অংশ নিচ্ছে কুড়ি থেকে ২৫ বছরের তরুণরা। তরুণদের ভুল তথ্য দিয়ে হিংস্র করে তোলা সহজ। যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা সমাজে ইসলামী আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে এবং একজনকে কিশোর বয়সেই এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলে।
এর আগে রাজধানীর বেগুনবাড়ীতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করার পর জড়িত সন্দেহে আটক হয় জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম। আটকের পর তারা হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে খুনীদের যে বিবরণ পাওয়া যায় তাহলো- একজন খাটো ও স্বাস্থ্য মোটা, তার গায়ে ছিল সাদা পোশাক। অপরজনের গায়ে ছিল কোর্ট। তুলনামূলক লম্বা। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে কুপিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে গোয়েন্দা কর্মকতাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, অভিজিৎ কিংবা তারও আগে রাজীবসহ রাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম, রাজধানীর রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী এবং গোপীবাগ সিক্স মার্ডারের ধরণ এক। সবখানেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে তরুণদের সম্পৃক্ততায় নিশ্চিত হয়।
তরুণদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেবল ২০ থেকে ২৫ নয়, কখনও কখনও আরও কম বয়সী তরুণরা এসব হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। যারা কাজটি করছে তারা নিম্ন-মধ্য-উচ্চ সকল বিত্তের মধ্যেই আছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠীরা প্রযুক্তিতে খুব দক্ষ হওয়ায় এরা ইন্টারনেটেই নানা প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে কিশোর ও তরুণদের কর্মী হিসেবে রিক্রুট করছে।
তিনি বলেন, শঙ্কার বিষয় হলো- সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলাম নামে যা শোনা যাচ্ছে, সেসবের ক্ষেত্রেও এরা এমন তরুণদের রিক্রুট করে যারা টেকনোলজির দিক থেকে খুব দক্ষ। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণরাও সেই দলে জড়িয়ে পড়ছে।
ভিডিও দেখুন:
এজে/