এক ঘণ্টার অপারেশন স্টর্ম-২৬

picture by sazzadhossain_25
রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনের একটি বাসায় অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের আস্তানা উচ্ছেদে পরিচালনা করা হয় অপারেশন স্টর্ম-২৬। মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে এ অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় ৬টা ৫১ মিনিটে। এক ঘণ্টার এ অভিযানে আস্তানায় থাকায় ৯ জঙ্গি নিহত হয়।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর থানা পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলে কল্যাণপুরের মেস বাসায় জঙ্গিবিরোধী তল্লাশী শুরু করেন। কয়েকটি মেসে অভিযান চালিয়ে তারা ৫ নম্বর রোডে আসেন। এই রোডে জাহাজ বিল্ডিং খ্যাত ৫ নম্বর বাসায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। পুলিশ তিনতলা পৌঁছার পরই শুরু হয় জঙ্গি হামলা। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে এক জঙ্গি নিহত হয়। আটক করা হয়  আরেকজনকে। আটক জঙ্গির বরাত দিয়ে তখন পুলিশ জানিয়েছিল ভবনটির ৫ তলায় ১১জন জঙ্গি রয়েছে। বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদও ছিল সেখানে।  

ডিবি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনাস্থলে ঊর্ধ্বতন স্যারেরা রয়েছেন। তারা আলোচনা করে অভিযানের কৌশল নির্ধারণ করছেন, যাতে ক্যাজুয়ালিটি না হয় সেজন্য সময় নেওয়া হচ্ছে।

এরপর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কল্যাণপুর ৫ নম্বর সড়কে ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা। রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এ সময় পুলিশ জানায়, সকালে সূর্য ওঠার পরই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

picture by sazzadhossain_34ভোর সাড়ে চারটায় ঘটনাস্থল কল্যাণপুর মেইন রোড থেকে ৫ নম্বর রোডের চারপাশে এক- দেড় কিলেমিটার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক গাড়ি মোতায়েন করা হয়। তখন জানানো হয় ভোরের সূর্য উঠলেই অভিযান শুরু হবে।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে অপারেশন স্ট্রর্ম-২৬ শুরু হয়। এ বিশেয়াতি পুলিশ সোয়াতের নেতৃত্বে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, থানা পুলিশের সদস্যরা যৌথ এ অভিযানে অংশ নেন। এক ঘণ্টা পরিচালিত এ অভিযান শেষ হয় ছয়টা ৫১ মিনিটে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সদস্যদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক এম-ফোর রাইফেল ও স্নাইপার রাইফেল ছিল। অভিযান শুরুর আগেই ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, অভিযানের শুরুতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে আশপাশের ভবনে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন সদস্য। মূল দল ভবনটির সিঁড়ি দিয়ে গুলি করে উঠতে থাকে। পাঁচ তলার দরজায় আটকানো থাকায় গুলি করে দরজা ঝাঁঝরা করে ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে জঙ্গিরা হ্যান্ড গ্রেনেড ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু চৌকষ বাহিনীর সামনে তারা ঠিকতে পারেনি। অভিযানের সময় ৯ জঙ্গি নিহত হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিদের পরাস্ত করে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করার পর ২টি পিস্তল, একাধিক ছুরি ও চাপাত্তি উদ্ধার করেছে। বেশ কিছু জিহাদি বইও উদ্ধার করা হয়। ভবনের ভেতরে কালো আইএস পোশাকও পাওয়া যায়। অভিযান শেষে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ভেতরে অবিস্ফোরিত হ্যান্ড গ্রেনেড ও ককটেল নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছে।

অভিযান সম্পর্কে ডিএমপির অতিরিক্তি কমিশনার শেখ মুহাম্মদ মারুফ হোসেন বলেন, কৌশলগত কারণে ভোরের আলো ওঠার পর অভিযান শুরু করি। অভিযানে জঙ্গিদের ৯জন নিহত হয়েছে।

অভিযানে সোয়াতের ভূমিকা নিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্পেশালাইজড (বিশেষায়িত) যে ইউনিট আছে, সোয়াত, বোম ডিসপোজাল টিম (বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল) এবং যারা এই অপারেশনে পারদর্শী, তাদের আমরা এখানে পাঠাইছি। পাঠানোর পর তারা রেকি করছে এবং অভিযান করার পূর্বে আমাদের যে সমস্ত প্রস্তুতি নিতে হয়, সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এবং আমরা রাতের বেলা না করে, রাতের বেলা করলে পুরো এলাকা আতঙ্ক হবে, সূর্যের আলো যখন শুরু হইছে, ৫টা ৫১ মিনিটে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর-

 

ছবি: সাজ্জাদ

/এএ/