জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার আবারও নিন্দা জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘জবির শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি ন্যায্য। আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান মিলে দ্রুতই একটি যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সমাধানে আসবেন।’ কোনও ভুল হলে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্ট করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে কথা বলেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলোর ন্যয্যতা বিচার করবেন শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়। আরও যুক্ত থাকবেন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখা ও সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া জবি শিক্ষার্থীদের দাবির একটি ফলপ্রসূ সমাধানে আসতে আমি ভিসি স্যার ও অন্যান্যদের সঙ্গে বসেছিলাম।’
সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত পরশু (মঙ্গলবার) রাতে যখন এসব দাবি নিয়ে জবি থেকে আমাকে জানানো হয়, তখন তাদের আমি গতকাল (বুধবার) রাত ৯টায় আমার বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু, গতকাল সকালে তারা আন্দোলনে নামেন এবং যমুনার কাছাকাছি পৌঁছে যান। কাল দুপুর থেকেই ভিসি স্যারের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করেছিলাম। শেষপর্যন্ত রাতে এক ঘন্টা ধরে তিনটা টকিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে আমি ভিসি স্যার ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ে যাই।’
‘সেখানে মিডিয়ার লোকজন শিক্ষার্থীদের থেকে ৫০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আমি ভিসি স্যারকে বললাম, আমি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কথা বলব। সেখানে যাওয়ার পর একটা গ্রুপ শ্লোগান দেয়। আমি বিব্রত না হয়ে, নিজের দায়িত্ব পালনে কথা বলা শুরু করি। পূর্বনির্ধারিত টকিং পয়েন্ট অনুযায়ী পুলিশের বাড়াবাড়ি অথবা স্ব-উদ্যোগে ‘উসকানি’মূলক কিছু করলে ক্ষমাপ্রার্থনা ও বিভাগীয় তদন্তের কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখনই বোতল নিক্ষেপ করেন একজন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী কেন এবং কার মদদে এ অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করলেন, তা আশা করি প্রশাসন দ্রুতই খতিয়ে দেখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর আমি হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন স্যারদের সঙ্গে আমার হতাশা ও ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করি। স্যাররাও এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহব্যাপী সোশাল মিডিয়ায় একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।’
এই আক্রমণের ফলে ন্যায্য দাবির আন্দোলন বিতর্কিত হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম, জবির আবাসন সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয়। পরবর্তী সময়ে ৫০ মিটার দূরত্বে আমি আরেকটা সাংবাদিক সম্মেলন করি। আমার অফিসিয়াল বক্তব্য, আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, দাবিপূরণের রোডম্যাপ ও পুলিশি হামলার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন। জবির শিক্ষার্থী ও শ্রদ্বেয় শিক্ষকদের উপর পুলিশি হামলার নিন্দা আমি আবারো জানাচ্ছি। জবি’র শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি ন্যায্য।আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান মিলে দ্রুতই একটি যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সমাধানে আসবেন।’
জবি থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দুজন শিক্ষার্থী শহিদ হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম। তিনি জবি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই আমি গিয়েছিলাম। জুলাই আমাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করেছে। আশা করি, এ বন্ধন কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ছিন্ন হবে না। আপনাদের যেকোনও প্রয়োজনে, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আপনারা আমাকে সঙ্গে পাবেন।’
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘আমি গতকাল (বুধবার) রাতে এসেই ডিএমপি কমিশনারকে বলে দিয়েছিলাম, যাতে জোরপূর্বক জবি শিক্ষার্থীদের সরানো না হয়। তাদের ওপর যেন কোনোরকম আক্রমণ না চালানো হয়। সবার সুমতি হোক। ভুল হলে, তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগোতে চাই।’