পালিয়ে বেড়াচ্ছে ছয় খুনি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার ‘আপাতত উপায় নেই’ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে কানাডা তার সাজা কমানোর কথা বলেছে। তারপরও ‘সাজা না কমিয়ে’ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।six-convicted-killers-of-Bangabandhu

তবে সরকার চেষ্টা করলেও শিগগিরই খুনিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা ফাঁসির কোনও আসামিকে সংশ্লিষ্ট দেশের হাতে ফিরিয়ে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর বন্দি বিনিময়ের চুক্তি না থাকায় আলাপ-আলোচনার হতে হবে দৃঢ় ও ধারাবাহিক।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ছয় খুনি এখনও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। বাকি পাঁচ আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন আর্টিলারি কোরের অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, বরখাস্ত হওয়া কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার ইউনিটের অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন।

পলাতক ছয়জনের মধ্যে তিনজনের অবস্থান জানা গেলেও বাকি তিনজনের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় আছে। আর সাবেক রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান আছেন জার্মানিতে।

দণ্ডপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর বিচারকাজ এতটাই বিলম্বিত হয়েছে যে, পলাতক ছয় খুনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যের নায়কদের ও তাদের সহযোগীদের সহযোগিতায় বিশ্বময় ঘুরে বেড়িয়ে আরামে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে।

কানাডার আইন অনুসারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা বেশি। ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকা অবস্থায় তারা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেবে না। যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এম রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’ আলোচনা কতদূর এগিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কানাডার পক্ষ থেকে সাজা কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা সম্ভব না বলে জানিয়েছি। তারপর থেকে আলোচনা অব্যাহত আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'আমার জানা মতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কিছু দেশ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়। সেক্ষেত্রে আসামিকে ফেরত পাঠানোর কথা উঠলে তারা দণ্ডাদেশ কমানোর কথা বলে। এর বাইরে তারা যেতে চায় না।'

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, ভাই, ভাগ্নে, ভাগ্নের স্ত্রীসহ ১৭ জনকে হত্যা করা হয়। বরখাস্ত হওয়া একদল সেনা সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চাকরিরত কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য ওই হত্যাকাণ্ড চালায়।

আরও পড়ুন: জন্মদিনের প্রথম প্রহরে কেক কাটলেন না খালেদা জিয়া
/ইউআই/এআরএল/আপ-এআর/